ঢাকা অফিস ॥ প্রত্যাবাসনের দীর্ঘস্থায়ী অনিশ্চয়তায় নিজের মাতৃভূমি মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে সৌজন্য সাক্ষাতে গণভবনে আসা জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডিকে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গারা তাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে দীর্ঘ অনিশ্চয়তার কারণে হতাশ হয়ে পড়ছে। এর একটি সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে। কারণ, এই অনিশ্চয়তা তাদের অনেককে অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত হতে প্ররোচিত করছে। বাংলাদেশ সরকার রাখাইন রাজ্যে যা পাওয়া যায় তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মিয়ানমারের পাঠ্যক্রম ও ভাষার পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম অনুসরণ করে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার সুবিধা দিচ্ছে বলে জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ১১ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার কারণে গভীর বনভূমি কক্সবাজারের উখিয়ার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। তারা গাছ কাটার মাধ্যমে বনভূমি হ্রাস এবং এলাকার পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ঘরে প্রতি বছর ৪৫ হাজার শিশুর জন্ম নিচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ ভাষানচর দ্বীপে রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে। এক লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িকভাবে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ভাষানচরকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গড়ে তুলেছে। এ পর্যন্ত ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে অস্থায়ী আশ্রয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী উদ্বাস্তু, রাষ্ট্রহীন ও বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের সহায়তায় ইউএনএইচসিআরের ভূমিকার প্রশংসা করেন। বৈঠকে ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি শেখ হাসিনার সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত অবস্থান তাদের অনেককে অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত হতে প্ররোচিত করবে। মিয়ানমার সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করতে তিনি বর্তমান মিয়ানমার সরকারকে অনুরোধ করেছেন। মিয়ানমারের বর্তমান সরকার প্রত্যাবাসন শুরু করতে সম্মত হয়েছে। ইউএনএইচসিআর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে। এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ছাড়াও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আফগানিস্তান ইস্যু বিশ্বব্যাপী উদ্বাস্তু বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ এম. জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এবং ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের প্রতিনিধি জোহানেস ভ্যান ডার ক্লাউ।
Leave a Reply