ক্রীড়া প্রতিবেদক \ রিয়াদ মাাহারেজের দুই গোলে পিএসজিকে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ২-০ গোলে পরাজিত করে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ম্যানচেস্টার সিটি। ইতোমধ্যেই লিগ কাপ নিশ্চিত করা সিটিজেনরা প্রিমিয়ার লিগ শিরোপার পথেও একপা দিয়ে রেখেছে। সে কারণে বলাই যায় ট্রেবল জয়ের অনেকটাই কাছাকাছি পৌঁছে গেছে পেপ গার্দিওলার দল। এর আগের চার মৌসুমেই গার্দিওলার অধীনে সেমিফাইনালের আগেই বিদায় নিতে হয়েছিল সিটিজেনদের। এর আগে বার্সেলোনায় থাকাকালীণ দুইবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয় করেছেন গার্দিওলা। পঞ্চম বছরে এসে শেষ পর্যন্ত ফাইনাল নিশ্চিত করতে পারায় সিটিতে তার সময়টা অবশেষে সফল হয়েছে বলে গার্দিওলা মন্তব্য করেছেন। যদিও ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ এই আসরে বেশ কয়েকবারই হতাশ হতে হয়েছে এই কাতালান কোচকে। এ সম্পর্কে গার্দিওলা বলেছেন, ‘এটি আমাদের সকলের ও ক্লাবের জন্যই সম্ভব হয়েছে। আমি সত্যিই দারুন গর্বিত। শেষ চার কিংবা পাঁচ বছরে আমরা কি করেছি তার অর্থ শেষ পর্যন্ত ফাইনালে পৌঁছানোর মাধ্যমে সফল হয়েছে। প্রতিদিনই ছেলেরা ধারাবাহিকতার প্রমান দিয়েছে এবং তারই ফসল আজকের এই জয়।’ প্রথম লেগেও ২-১ গোলে সিটির জয়ে আলজেরিয়ান স্ট্রাইকার মাহারেজ জয়সূচক গোলটি করেছিলেন। কাল দুই অর্ধে দুটি দুর্দান্ত গোল করে তিনি আবারো নিজের দক্ষতার প্রমান দিলেন। আগামী ২৯ মে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত হবে এবারের আসরের ফাইনাল। ২০০৮ সালে আবু ধাবী ভিত্তিক মালিকের অধীনে সিটির মালিকানা যাবার পর থেকে সৌভাগ্যের চাকা ঘুড়তে থাকে। এদিকে বিশ্বের অন্যতম দামী দুই খেলোয়াড় নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়েও চার বছর ধরে কিছুই করতে পারছে না পিএসজি। আরো একবার তাদেরকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ভাগে এসে হতাশ হতে হলো। কাফ ইনজুরির কারণে কাল পুরো ম্যাচ স্ট্যান্ডে বসেই দেখতে হয়েছে এমবাপ্পেকে। গত সপ্তাহে প্রথম লেগেও তিনি নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। কাল ইতিহাদ স্টেডিয়ামে শুরুটাও আগের ম্যাচের মতই ভাল করেছিল প্যারিসের জায়ান্টরা। প্রথমার্ধটা প্রায় পুরোটাতেই তাদের আধিপত্য ছিল। মাহারেজের দুই গোলের মাঝে মারকুইনহোস ও এ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া পিএসজির হয়ে দুটি দারুন সুযোগ নষ্ট করেছেন। তার উপর ম্যাচ শেষের ২০ মিনিট আগে ফার্নান্দিনহোকে ফাউলের অপরাধে ডি মারিয়া সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে গেলে বাকি সময়টা ১০জন নিয়েই সিটিকে প্রতিরোধ করতে হয়েছে পিএসজিকে। পিএসজি কোচ মরিসিও পোচেত্তিনো বলেছেন, ‘আমরা বরাবরের মতই শুরুটা ভালই করেছিল। বেশ কিছু সুযোগ তৈরী করে ম্যানচেস্টার সিটির উপর আধিপত্য ধরে রেখেছিলাম। কিন্তু সবকিছু সবসময় সহজ হয়না। সিটির মত দলের বিপক্ষে খুব একটা বেশী দল আধিপত্য দেখাতে পারেনা।’ ডি মারিয়ার লাল কার্ডের পর পুরো দল উত্তেজিত হয়ে উঠলে তাদের শান্ত করতে মাঠে নেমে পড়েছিলেন পোচেত্তিনো। ম্যাচ শেষে তিনি স্বীকার করেছেন দলের বিশৃঙ্খলা শেষ পর্যন্ত ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে। প্রথম লেগেও ইকে গুনডোগানকে চ্যালেঞ্জের অপরাধে ইদ্রিসা গুয়েকে লাল কার্ড দেখতে হয়েছিল। ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা দাবী জানিয়েছে প্রথমার্ধে ওলেক্সান্দার জিনচেনকোর হ্যান্ডবলে তাদের অবশ্যই পেনাল্টি পাওয়া উচিত ছিল। যদিও ডাচ রেফারি বিওন কুইপার্স এই ঘটনায় পেনাল্টি দিলেও পরবর্তীতে ভিএআর এর সহযোগিতায় তা বাতিল করেন। বলটি আসলে ইউক্রেনিয়ার মিডফিল্ডারের কাঁধ স্পর্শ করেছিল। ১১ মিনিটে অবশ্য সিটি যখন প্রথম গোলের দেখা পায় তখনো তাতে জিনচেনকো সম্পৃক্ত ছিলেন। সিটি গোলরক্ষক এডারসনের দুরপাল্লার পাস থেকে তিনি পিএসজির এরিয়ার মধ্যে ঢুকে পড়েন। কেভিন ডি ব্রুইনা তার কাট ব্যাক থেকে বল পেয়ে শট করলে তা পিএসজির রক্ষনভাগ রুখে দেয়। ফিরতি বলে ডানদিক থেকে কেইলর নাভাসকে মাহারেজ পরাস্ত করলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। বিরতির আগে ম্যাচে সমতা ফেরানোর দারুন সুযোগ নষ্ট করেন মারকুইনহোস। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোল করা অনেকটা অভ্যাসে পরিনত করে ফেলেছিলেন মারকুইনহোস। কিন্তু এবার এই ব্রাজিলিয়ানের হেড অল্পের জন্য ক্রসবারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। এমবাপ্পের পরিবর্তে মাঠে নামা মাউরো ইকার্দি পুরো ম্যাচে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন। রুবেন ডায়সের নেতৃত্বে সিটির দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রক্ষনভাগের বিপরীতে একমাত্র নেইমারই কিছুটা আগ্রাসী হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু যোগ্য সঙ্গীর অভাবে তিনিও সফল হতে পারেননি। কাউন্টার এ্যাটাক থেকে ৬৩ মিনিটে মূলত ম্যাচের আকর্ষণ শেষ করে দেন মাহারেজ। বাম দিক থেকে ডি ব্রুইনার কাছ থেকে বল পেয়ে যান ফোডেন। তার নিখুঁত ক্রসে মাহারেজ নাভাসকে পরাস্ত করলে ব্যবধান দ্বিগুন করার পাশাপাশি সিটির জয় নিশ্চিত করেন। দুই গোলে পিছিয়ে থেকে পরাজয় যখন প্রায় নিশ্চিত ঠিক তখনই প্রথম লেগের মতই পিএসজির খেলোয়াড়রা বিশৃঙ্খল হয়ে উঠে। ফার্নান্দিনহোকে অযথাই ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন ডি মারিয়া। দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের হাত থেকে কোনমতে রক্ষা পান মার্কো ভেরাত্তি।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply