নিজ সংবাদ ॥ কুষ্টিয়ায় লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে বৃষ্টি আর লকডাউন একাকার হয়েছিল। ভোর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি সারা দিনই ছিল। জুম্মার নামাজের আগে এবং পরে বেশ কিছু সময় বৃষ্টি বিরাম নিলেও আবারো সন্ধ্যা পর্যন্ত লাগাতার বৃষ্টিতে লকডাউনে মানুষেরা ঘরমুখি হয়ে পড়ে। সকালের দিকে বিশেষ প্রয়োজনে মানুষজন বের হয়েছিল। তবে সারা দিনের বৃষ্টিতে মানুষজন ঘর মুখো হয়ে পড়ে। শহরের প্রধান সড়কগুলোতে পুলিশ ও সেনা সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। হাতে গোনা কয়েকটি রিকসা ও অটো রিকসা চলাচল করতে দেখা গেছে। শহরের প্রধান সড়ক এনএস রোড ও মজমপুরগেট থেকে শুরু হয়ে চৌড়হাস পর্যন্ত কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়কেই পুলিশ তৎপরতা বেশি থাকে। অন্য অলিগলিতে পুলিশের কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি। জেলার সর্বত্র করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাওয়াতে পুরো জেলা জুড়ে মানুষের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় মানুষজনকে ঘরের বাইরে বের হতে দেখা গেছে। লকাডউনের প্রথম দিন থেকেই সেনাবাহিনীর টহল চোখে পড়েছে। গতকাল শুক্রবারও বৃষ্টির মধ্যে সেনা বাহিনীর সদস্যদের জেলার ৬টি উপজেলায় টহল দিতে দেখা গেছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে জনগনকে ঘর থেকে বিনা প্রয়োজনে বের না হওয়া আর মাস্ক ব্যবহারের উপর জোর দেন। এদিকে অনেক স্থানে সেনা সদস্যদের গাড়ি দেখলে মানুষজনের মাঝে আতংক বিরাজ করে। অনেক স্থানে সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখেই মানুষজনকে দৌড় দিতে দেখা গেছে। সেনা ও পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত চালু ছিল সর্বত্র। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে জেলায় একাধিক টিম সর্বত্র চষে বেড়িয়েছে। অনেক স্থানে বিনা কারনে ঘর থেকে বের হওয়ার অপরাধে এবং মাস্ক ব্যবহার না করার অপরাধে জরিমানা আদায় করতে দেখা গেছে। কুষ্টিয়ার এনডিসি ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট হাফিজুর রহমান জানান-জেলার ৬টি উপজেলায় সেনাবাহিনীর ৬টি ইউনিট কাজ করছে। সেনা সদস্যরা প্রতি দিন যশোর সেনানিবাস থেকে এসে সারা দিন জেলার ৬টি উপজেলায় ভাগ হয়ে দায়িত্ব পালন শেষে বিকেলে যশোরে সেনানিবাসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় আবার পরের দিন যশোর থেকে আসে। এদিকে পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলামের নেতৃত্বে জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়মিত টহলের অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার বিকেলে শহরের বিভিন্ন এলাকাসহ হরিপুর এলাকায় পরিদর্শন করতে দেখা গেছে। পুলিশ সুপার বিভিন্ন স্থানে গাড়ি থেকে নেমে মাস্ক বিহিন মানুষদের মাস্ক ব্যবহার ছাড়া এবং বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার উপদেশ দেন। পুলিশ সুপারের এই বহর দেখে সাধারন মানুষজনের মাঝে যেমন ভয় হয় আবার অনেকের মাঝে কৌতুহল সৃষ্টি হয়। করোনার কারনে জেলা জুড়ে চলছে লকডাউন। লকডাউন চললেও বৃষ্টির কারনে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ছন্দপতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চাকুরীজীবিদের নির্দিষ্ট আয় থাকলেও সাধারন মানুষের আয় উপার্জন একেবারেই বন্ধ। মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্তদের আয়ের পথ একেবারেই সংকুচিত হয়ে পড়েছে। জেলার মুল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের অবস্থা যেমন বেহাল আবার তাদের কর্মচারীদের অবস্থায় আরো নাজুক। মাসের পর মাস দোকানের ভাড়া দিতে হচ্ছে কিন্তু দোকানপাট বন্ধ। দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল আর সংসার চালাতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের অবস্থা একেবারেই নাজুক। এভাবে চলতে থাকলে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়তে হবে।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply