রনজক রিজভী –
প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে লাখো জনতার সামনে তিনি বলেছিলেন- “সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছু নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই”। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তাঁর কথা রেখেছেন। প্রতিশ্র“তি থেকে কখনই সরে যাননি। দেশে ফেরার দিনটির মতো ঝড়-তুফান কখনই তাঁর পিছু ছাড়েনি। তবুও জনগণের পাশেই আছেন। ১৯ বার হত্যা চেষ্টার পরও শেখ হাসিনার ভাবনায় জনগণ ও দেশ। এর জন্যে বারবার তাঁকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। সামরিক শাসকের অস্ত্র, রক্তচক্ষু, নিষেধাজ্ঞা আর নানামুখী ষড়যন্ত্র তাঁকে রুখতে পারেনি। তবে আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল ঘরে তুলতে দেয়নি ষড়যন্ত্রকারীরা। যার বড় প্রমাণ একানব্বইয়ের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়। কেন আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসার পথে এতো বাধা, এতো ষড়যন্ত্র। এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূ-লুণ্ঠিত করা হয়েছে। বাঙালি জাতির অস্তিত্ব বিপন্ন করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরুও সেখান থেকে। বঙ্গবন্ধু ধর্ম নিয়ে রাজনীতির বিরুদ্ধে হুংকার দিয়েছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে বজ্রকণ্ঠ উচ্চারণ করেছিলেন। জনগণের পক্ষ ও স্বার্থ নিয়ে কথা বলে অনেকেরই প্রতিপক্ষ হয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিকে কখনই প্রশ্রয় দেননি। দেশ ও জাতির কল্যাণ ছিল তাঁর স্বপ্ন ও লক্ষ্য। সেই জায়গা থেকে দেশকে পিছিয়ে দিতেই যতো ষড়যন্ত্র। সাম্প্রদায়িক শক্তি, পরাশক্তি এবং আন্তর্জাতিক সুবিধাবাদীরা বাংলাদেশকে দেখতে চেয়েছে তলাবিহীন ঝুড়ি। একটি সাম্প্রদায়িক ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং আধিপত্য বিস্তারও ছিল অগ্রগন্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা পরবর্তী রাজনীতিতে এর অনেক কিছুই দৃশ্যমান হয়েছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এবং পরাশক্তির উত্থান ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে, থাকবে। যা শেখ মুজিবুর রহমান জীবিত থাকাকালে কখনই সম্ভব হতো না। ষড়যন্ত্রকারীরা জানতো, আওয়ামী লীগ আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে অনেক কিছুই বদলে দিতে পারে। আদায় করতেও জানে। দলটির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এমনই ইতিহাস। আর বঙ্গবন্ধুর তেজদীপ্ত নেতৃত্ব আওয়ামী লীগকে দিয়েছিল ভিন্নমাত্রা। একারণে সেই রক্তের ধারা চিরতরে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টাই ছিল ঘাতকদের লক্ষ্য। আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনাকে বারবার টার্গেট করার কারণও একই।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যদি দেশে না ফিরতেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দায়িত্ব না নিতেন। গণতন্ত্র, উন্নয়ন, প্রগতিশীল রাজনীতি, আধুনিক উন্নত সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আর জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ কতোটা সম্ভব হতো। এই প্রশ্ন বারবারই সামনে আসে। কেননা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও এখনও চলমান। এরই মধ্যে সাম্প্রদায়িক শক্তি মাঝে মধ্যেই উঁকি দিচ্ছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল বা অংশীদার হতে সেই শক্তি জানান দিচ্ছে। যা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পতাকা নিয়ে শেখ হাসিনা শক্ত হাতে মোকাবেলা করে চলেছেন। দেশের অর্থনীতিসহ সামগ্রীক অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে নতুন এক চক্রান্তে অনেকেই যুক্ত। যা প্রতিহত করা একমাত্র শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব। একারণে বলার অপেক্ষা রাখে না, শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন না হলে অন্য এক বাংলাদেশকে দেখতে হতো। সাম্প্রদায়িক, পরাজিত শক্তি ও জঙ্গিবাদের উত্থান হতো। তাদের দাপটে পশ্চাৎমুখী হতো দেশ। সম্ভাবনার সব দুয়ার থমকে দাঁড়াতো। দীর্ঘ সামরিক শাসন আর সাম্প্রদায়িক শক্তির অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গঠিত সরকারের সময় পিছিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বকে দেখাতে সক্ষম হয়েছেন শেখ হাসিনা। বিশ্ব মোড়ল তথা, নীতি নির্ধারণী দেশগুলোর সংলাপে তাঁর অংশগ্রহণ এবং পরামর্শও দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। যা বাঙালি জাতির জন্যে গর্বের। এই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টি সামগ্রিক বিষয়েই ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ সবই শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ফল।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আন্দোলন সংগ্রামের রাজনীতি ও সরকার গঠনে সফল। তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও নিষ্ঠা বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন মাইলফলক স্থাপন করেছে। সেই দিন বেশি দূরে নয়; বিশ্ব রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা বারবার প্রাসঙ্গিক ও দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবেন। সংকটেও সম্ভাবনা কীভাবে জাগিয়ে রাখতে হয়, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হয়, তা শেখ হাসিনার কাছ থেকেই বিশ্বকে শিখতে হবে। তবে বাংলাদেশের রাজনীতি তাঁর কাছ থেকে কতোটা শিখতে পেরেছে। জনগণ কতোখানি নিজেদের বদলেছে। ভাবার সময় এসেছে। কেননা শেখ হাসিনা যতো দূরে দেখতে পান, দেশের বেশিরভাগ রাজনীতিবিদ এবং দেশের মানুষ সেই জায়গা থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে। তাই সবাইকে শেখ হাসিনার মতো দূরদর্শী হওয়া দরকার। তবেই সবক্ষেত্রে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। তাহলে জনগণের পিছিয়ে থাকার দায় কে নেবে। অবশ্যই এ দায় সরকারের একার নয়। কারণ রক্ষণশীল মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে জনগণকেই। একই সঙ্গে অসাম্প্রদায়িক চেতনা জাগ্রত করতে হবে। ধর্মপরায়নের লেবাসে জঙ্গিবাদ বা উগ্রপন্থা লালন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। শিক্ষার সত্যিকারের আলো ছড়াতে হবে। এবং সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হলেই কেবল উদার অসাম্প্রদায়িক চেতনার রাজনীতিচর্চা ও বিকাশের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন থাকবে। সেখানে পিছিয়ে থাকার কারণে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে মাঝে-মধ্যে সাম্প্রদায়িক শক্তির উল্লম্ফন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা দূর করতে শেখ হাসিনা নিশ্চয় সফল হবেন। বাংলাদেশ তাকিয়ে আছে। সফল হতেই হবে। তা না হলে বাঙালি জাতি পিছিয়ে যাবে বহু দূর। অর্জনের বেশির ভাগই কালো ছায়ায় ঢেকে যেতে পারে।
রনজক রিজভী, গণমাধ্যম কর্মী।
ৎরুাুহপধ@মসধরষ.পড়স
০১৭১১৭৮৭৩৭৯
You cannot copy content of this page
Leave a Reply