আজ ২৬ জুন আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস। মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় ২৬ জুনকে মাদকবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরের বছর থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দেশটা স্বাধীন হলো ৭১ এ, আমরা পেলাম লাল সবুজের পতাকা আর ছোট্ট একটি মানচিত্র। এরইমধ্যে পেরিয়েছে অনেক বছর, কতো নেতা এলো গেলো! কেউ কালো টাকায় কিনছে রাজনীতি, আবার কেউ ছড়িয়েছে ভয়াবহ মাদক! কিন্তু কতিপয় নেতারা নির্বিকার থাকলেও মাদকের বিরুদ্ধে অনেকটা নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। জীবন বিনাশী নীল নেশা মাদকদ্রব্য। এ এক তীব্র নেশা। এই নেশায় সীমান্তবর্তি এলাকা কুষ্টিয়ার যুব সমাজ তথা শিক্ষার্থীরাও যখন ভয়াবহ মাদকের দিকে ঝুকতে থাকে। কিশোর কিশোরীসহ শিক্ষার্থীদের নিয়ে সংকিত হয়ে পড়ে অভিভাবকরা। ঠিক সেই মুহুর্তে বাংলাদেশে প্রথম শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের মাদকের ব্যাপারে সচেতন করতে সাহসের সাথে এগিয়ে আসে “মাদক প্রতিরোধ কমিটি” কুষ্টিয়ার একটি সামাজিক সংগঠন। এই সংগঠনের মাধ্যমে মাদকে আক্রান্ত এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অবস্থা যেনো আরো ভয়াবহ আকার ধারন না করে সে সব বিষয়ে নানা কর্মসূচী পালন করতে থাকে। এতে এই এলাকার মাদক সেবী ও বিক্রেতাদের হুমকী ধামকীও পেতে হয় একের পর এক। কিন্তু তবুও থেমে যায়নি ‘মাদক প্রতিরোধ কমিটি’র কার্যক্রম। এক সময় এই কমিটির কার্যকরতা দেখে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সাধুবাদ জানানো হয়। আমাদের দেশের অসংখ্য তরুণ, তরুণী বিভিন্ন নেশায় আসক্ত। কুষ্টিয়া শহরে, শহরতলীতে, গ্রামে, দূর্গম এলাকাসহ বর্তমানে সমাজের রন্ধে রন্ধে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছে এই মরণ নেশা। মূলত বন্ধু-বান্ধবদের সাহচর্যে সিগারেট থেকে নেশা শুরু হয় এবং পরে ধীরে ধীরে মাদকের প্রতি আসক্তি হয়। আর এই মরণ নেশা আসক্তি থেকেই যুব সমাজ আজ নানা অপরাধের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে। সম্ভাবনাময় বাংলাদেশকে মাদকের ভয়াবহতা থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করার লক্ষ্য নিয়ে কুষ্টিয়া হাটশ হরিপুর ইউনিয়নে ২০১৪ সালের জুন মাসে কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রিজু কিছু তরুণ যুবককে সাথে নিয়ে হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন মাদক প্রতিরোধ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন হাসিবুর রহমান রিজু। এরপর ২০১৫ সালের ১লা জানুয়ারি হরিপুর বাজারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় কুষ্টিয়া জেলার সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমানের উপস্থিতিতে একটি মাদক বিরোধী আলোচনা সভায় সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রিজুকে সভাপতি করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদিত হয়। সেই কমিটির প্রতিটি সদস্য মাদকের ভয়াবহতা থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করার লক্ষ্য নিয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও সেমিনার করতে থাকে। এরপর ২০১৭ সালের ২৭ মে পুনাক ফুড পার্ক পার্টি সেন্টারে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহেদ ও জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমানের উপস্থিতিতে হাসিবুর রহমান রিজুর নেতৃত্বেই কুষ্টিয়া জেলা মাদক প্রতিরোধ কমিটি নামের একটি কমিটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই কমিটি এখন প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়েও করা হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলা মাদক প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি হাসিবুর রহমান রিজুকে সভাপতি করে গত ২১ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে বাংলাদেশ মাদক প্রতিরোধ কমিটি কেন্দ্রীয় সংসদ গঠন করা হয়। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এই দেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে, সেই উন্নয়নকে যাতে কোনোভাবেই মাদক ব্যবসায়ীরা বাধাগ্রস্ত না করতে পারে। আমরা প্রতিনিয়ত স্কুল কলেজ মাদ্রাসা এমনকি প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় গিয়ে উঠান বৈঠক পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সাথে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে এক ঝাঁক তরুণ যুবক। আজ আমরা অনেকটা গর্বের সাথে বলতে পারি সারা বাংলাদেশে প্রথম কুষ্টিয়াতে মাদকের বিরুদ্ধে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গঠিত হয়। আমাদের শ্লোগান ছিল ‘মাদকের বিরুদ্ধে রুখলে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ’। আপনারাই ভাবুন এখন আমাদের দেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে বর্তমানে মাদকসেবীর সংখ্যা অন্তত দেড় কোটি। এর মধ্যে রয়েছে ১ কোটি মাদকাসক্ত। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে যে, মাদকসেবীরা গড়ে প্রতিদিন অন্তত ২০ কোটি টাকার মাদক সেবন করে থাকে। হিসাব অনুযায়ী মাসে ৬০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে সারা দেশে প্রায় ৩০ লাখ মাদক ব্যবসায়ী প্রতিদিন কমপক্ষে প্রায় ২০০ কোটি টাকার মাদক কেনাবেচা করে। অধিদপ্তর, আসক্তদের শতকরা ৯০ ভাগকে কিশোর-তরুণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাদের শতকরা ৪৫ ভাগ বেকার এবং ৬৫ ভাগ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট। আর উচ্চশিক্ষিতের সংখ্যা ১৫ ভাগ। তবে আরো বেশ কয়েকটি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, অবৈধ মাদকদ্রব্য আমদানির জন্য প্রতি বছর ১০ হাজার কোটিরও বেশি টাকার মুদ্রা বিদেশে পাচার হচ্ছে।
আমাদের অর্জন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রাকিবুল হাসান ও জামাল উদ্দিন আহমেদ এর নিকট থেকে সম্মাননা স্মারক অর্জন এছাড়াও জেলা প্রশাসক ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের এর নিকট থেকে বেশ কয়েকবার সম্মান স্মারক অর্জন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাদের এই সংগঠন বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বেসরকারি মাদক বিরোধী সংগঠনের স্বীকৃতি দেন এবং সারা বাংলাদেশের রোল মডেল হিসেবে ঘোষণা দেন। আমাদের ভিশন ও মিশন হলো; মাদকাসক্তি মুক্ত বাংলাদেশ গড়া এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিতকরণ, মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি। জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে নিবিড় কর্ম-সস্পর্ক তৈরির মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি