নিজ সংবাদ ॥ কুষ্টিয়া শহরের একটি বাসায় হামলার শিকার হয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ। হামলায় রক্তাত্ব জখম হয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পৌর এলাকার পিটিআই সড়কে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশের উপস্থিতিতেও প্রতিপক্ষ গ্র“পের নেতা-কর্মিরা তাকে বেধড়ক মারধর করেন। পরে পুলিশের গাড়িতে তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে চিকিৎসা না নিয়ে খালি গায়ে কয়েকজন কর্মিকে সাথে নিয়ে পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর মুর্যালে যান ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ। এসময় তার সারা মুখ রক্তাত্ব ছিল এবং কপাল দিয়ে রক্ত ঝড়ছিল। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগের দু’পক্ষ। আধিপত্য বিস্তার ও কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধে হামলা হয়েছে বলে দাবি করেন সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ। অপর দিকে ছাত্রলীগের অপর পক্ষের দাবি মেয়ে নিয়ে অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় স্থানীয় জনতা শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জকে আটক করে গণধোলায় দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের দিকে শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ খাওয়ার জন্য পিটিআই রোডে তার খালার বাসায় যান। খাওয়া-দাওয়া শেষে তিনি ওই বাসায় বসে গল্প করছিলেন। এ সময় শহর ছাত্রলীগের নেতাকর্মিরা ওই বাসায় গিয়ে চ্যালেঞ্জের খোঁজ করতে থাকে। ভয়ে চ্যালেঞ্জ বাসার টয়লেটের ফলস ছাদে আশ্রয় নেয়। ছাত্রলীগের কর্মিরা সেখানে উঠে টেনে হিঁচড়ে তাকে নিচে নামিয়ে আনেন। এরপর ছাত্রলীগের কর্মিরা লাঠি ও রড দিয়ে পেটাতে পেটাতে সামনের সড়কে নিয়ে আসে। ধারালো অস্ত্র দিয়েও তার মাথায় আঘাত করা হয়। এ সময় তারা শ্লোগান দিতে থাকে। বাড়ির মালিক এক নারী বলেন, চ্যালেঞ্জ তাদের আত্মীয়। দুপুরের দিকে তিনি আমাদের বাড়িতে আসেন। বাড়িতে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় বাইরে থেকে ছাত্রলীগের অনেক ছেলে-পেলে লাঠি সোটা হাতে বাসার মধ্যে ঢুকে পড়ে। পরে টয়লেটের ফলস ছাদে পালানো অবস্থায় তাকে মারতে মারতে নিয়ে যায়।
তবে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অন্তর জানান, এঘটনার সাথে ছাত্রলীগের কোনভাবেই সম্পৃক্ত না। শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ শহরের পিটিআই রোডের একটি বাসায় মেয়ে নিয়ে অনৈতিক কর্মকান্ডে থাকা অবস্থায় স্থানীয় জনতা তাকে আটক করে গণধোলায় দেয়। এর আগেও শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ’র বিরুদ্ধে জেলা ছাত্রলীগের এক নারী নেত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়াসহ উত্যক্ত করার অভিযোগ এনে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন এবং সংবাদ সম্মেলন করে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেছিলেন। এ ঘটনা সে সময় কুষ্টিয়াসহ দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। শহর ছাত্রলীগ নেতা হাসিব কোরাইশী জানান- মঙ্গলবার দুপুরের পর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ শহরের পিটিআই রোডের এক নারীর ফ্ল্যাটে যান। ওই বাসায় তাকে আটকের পর অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগে গণপিটুনি দিয়েছে স্থানীয়রা। আহত শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ বলেন, কমিটি গঠন নিয়ে মূলত বিরোধ তৈরি হয়েছে। আমি ঢাকায় ছিলাম। কয়েকদিন আগে কুষ্টিয়া এসেছি। দুপুরে জেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ অজয় সুরেকার অফিসে দেখা করতে যায়। সেখান থেকে বের হলে কয়েকজন যুবক আমাকে রেকি করতে থাকে। সেখান থেকে পিটিআই রোডে আমার খালার বাসায় যায়। সেখানে গিয়ে আক্রমন করে জেলা ও শহর ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা-কর্মি। আমার কি দোষ? আমি জামায়াত-ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি এটা কি আমার দোষ? তারা আমাকে বেদম মেরেছে। দল ক্ষমতায় থাকতে এই প্রতিদান পেলাম। আমি আমার নেতা মাহবুবউল আলম হানিফ ভাইয়ের কাছে বিচার দিয়েছি। করোনাকালিন আমি ও আমার ছেলেরা মানুষের জন্য কাজ করে দলের কাছ থেকে এই প্রতিদান পেলাম। আমি বিচার চাই, বিচার চাই। চ্যালেঞ্জ অভিযোগ করে বলেন, কমিটি নিয়ে নোংরামি চলছে, তারা পরিকল্পিতভাবে আমাকে হত্যা করার উদ্দেশে হামলা করে। চাকু দিয়ে আমাকে জবাই করতে চাই তারা।
যে ফ্ল্যাট থেকে চ্যালেঞ্জকে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে মারপিট করা হয় ঐ ফ্ল্যাটের বাসিন্দা শিরিন আক্তার বলেন, চ্যালেঞ্জ আমার ফুপাতো বোনের ছেলে। আমার বাসায় দুপরে খেতে আসছিলো। আমি বাইরে ছিলাম। বাসায় আমার বড় মেয়ে ছিলো। শিরিন আক্তারের বড় মেয়ে শবনম বলেন, ‘ ভাইয়ার সঙ্গে পারিবারিক ভাবে আমার বাগদান হয়ে আছে। সেটা দুবছর আগে। ছাত্রলীগের কমিটির কারনে বিয়ে হচ্ছে না। কমিটি ভেঙ্গে গেলে বিয়ে করবেন। দুপুরে বাসায় খেতে এসেছিলেন। ছাত্রলীগের বেশ কিছু ছেলে এসে দরজা ভেঙ্গে ভাইয়াকে টেনেহিঁচড়ে মারধর করতে করতে নিয়ে যায়। প্রতিবেশী নার্গিস খাতুন বলেন, চ্যালেঞ্জ দুবছর ধরে ওই বাসায় আসা যাওয়া করেন। তাদের জানানো হয়েছে তিনি বড় মেয়ের স্বামী। আজ দুপুরে বেশ কয়েকজন ছেলে লাঠি নিয়ে তাকে মারতে মারতে নিয়ে যায়। তারা ভয়ে বাসা থেকে বের হয়নি।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। বিস্তারিত জানি না। জেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক আজগর আলীর সাথে কথা হলে বলেন, এটা একটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা, গুটি কয়েক নেতা তাদের ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য প্রকশ্যে জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকে ওপর হামলা চালিয়েছে। এটা অবশ্যই দু:খজনক। কারা দলের মধ্যে ঢুকে এ সমস্ত কাজ করছে তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খাঁন জানান, ছাত্রলীগ নেতা শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ শহরের পিটিআই রোডস্থ একটি বাড়িতে গিয়েছিলেন। এ সময় স্থানীয় জনতা উত্তেজিত হয়ে ওই বাড়িতে ঢুকে হাফিজের ওপর হামলা করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অপরাধীদের ছাড় দেওয়া হবে না।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply