নিজ সংবাদ \ কুষ্টিয়ায় ভুয়া পশু চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় লক্ষাধিক টাকার গরুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় থানায় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন গরুর মালিক সৌরভ হোসেন। নিজেকে পশু চিকিৎসক দাবি করা ঐ ব্যক্তির নাম রুমন আলী (৩২)। তিনি জিয়ারখী ইউনিয়নের মীর আজিজুল হক ফারুকের ছেলে। থানায় অভিযোগের পর মিলপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে ভুক্তভোগী ও পশু চিকিৎসকসহ দুই পক্ষের লোকজন নিয়ে সমাধানের জন্য ডাকা হলেও সেখানে ঐ পশু চিকিৎসক তার সেনা কর্মকর্তা ভাইয়ের নাম ভাঙিয়ে দম্ভ দেখিয়ে বের হয়ে যায়। এ সময় ভুয়া পশু চিকিৎসক রুমন আলী ক্ষমতার কথা উলেখ করে বলেন, প্রশাসনিকভাবে আমার অনেক উচ্চ পর্যায়ের মানুষ আছে, আমি এভাবে সমাধান করবো না, তোমারা যেভাবে পারো সমাধান করো। এদিকে এ ঘটনার পরও যুব উন্নয়ন থেকে তিনমাসের পশু পালনের প্রশিক্ষণ নিয়ে চিকিৎসক বনে যাওয়া রুমন আলী দোষ চাপাচ্ছেন জেলা ভেটেরিনারি সার্জনের উপর। আর নিজে বাঁচার জন্য রুমন আলীকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন খোদ জেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. কিশোর কুমার কুন্ডু। জানা গেছে, গত মঙ্গলবার(২৬ জুন) কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের সাঁওতা গ্রামের মৃত মিজানুর রহমানের ছেলে সৌরভ হোসেনের পালনকৃত গরুর জ¦র আসে। পাশ্ববর্তী এলাকার নিজেকে পশু চিকিৎসক দাবি করা রুমন আলীকে জানালে তিনি এসে প্রথমে গরুটিকে ৬টি ইনজেকশন দিয়ে চলে যায়। সন্ধায় আবার এসে গরুর কিছু খাওয়ার ওষুধ দিয়ে যায়। গরুর অবস্থা আরও খারাপ হলে পরেরদিন সকালে আরও ৬টি ইনজেকশন দিলে গরুর প্রসাব পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়। গরু খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিলে অবস্থা আরও সংকটাপন্ন দেখে রুমন আলী জেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. কিশোর কুমার কুন্ডুকে ডেকে আনেন। তার সাথে আর দুইজন সহযোগী ছিলেন। তারা গরুকে আরও ৪টি ইনজেকশন দিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে গরুটি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। সৌরভ হোসেন বলেন,খোঁজ নিয়ে জানতে পারি রুমন আলী যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে পশু পালনের তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রশিক্ষণ নেয়ার পরে তিনি নিজেকে পশু চিকিৎসক দাবি করে বিভিন্ন এলাকায় গবাদি পশুর চিকিৎসা দেয়া শুরু করেন। এ সংক্রান্ত তার বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। ভুয়া হলেও তাকে সহায়তা করেন খোদ জেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. কিশোর কুমার কুন্ডু। তিনি আরও বলেন, গরুটি(ষাড়) দুই সপ্তাহ আগে কেনা হয়েছিল ১ লাখ টাকায়। একটি ঘর তুলবো সেই আসায় আমি গরুটি লালন-পালন করছিলাম। কিন্তু পশু চিকিৎসক রুমন আমার সেই আসাটুকুও শেষ করে দিয়েছে। আমার শেষ সম্বল টুকুও হারিয়ে ফেললাম। সৌরভ বলেন, পশু চিকিৎসক রুমন আলীর ভুল চিকিৎসায় হোক আর ভেটেরিনারি সার্জন কিশোর কুমার কুন্ডুর ভুলেই হোক আমার তো লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়ে গেলো। আমি গরিব মানুষ আমি কিভাবে এতো বড় লস মেনে নেব তাদের ভুলে, যেহেতু তারা একে অপরের উপর দোষ চাপাচ্ছেন, তাই তারা দুজনে মিলে আমার এই ক্ষতি পুষিয়ে দিক। নিজেকে দাবি করা পশু চিকিৎসক রুমনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কিছু বলতে পারবো না। আমার চিকিৎসায় গরু মরেনি। গরু মরেছে জেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. কিশোর কুমার কুন্ডুর চিকিৎসায়। কারণ রাতে উনি শেষ চিকিৎসা দিয়েছেন। জেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. কিশোর কুমার কুন্ডুর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি গিয়েছি যখন গরু ভুল চিকিৎসার কারনে যায় যায় অবস্থা। ততক্ষণে গরুর খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারপরও আমি ইনজেকশন ও স্যালাইন পুশ করে শেষ চেষ্টা করেও গরুটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার এস আই সাহেব আলী বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরে আমি উদ্যোগ নিয়ে দুই পক্ষের সাথে সমাধানে বসেছিলাম। কিন্তু কোন সুরহা হয়নি। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply