ঢাকা অফিস ॥ করোনাভাইরাসের ভুয়া প্রতিবেদন দেয়ার অভিযোগে রাজধানীর চারটি বেসরকারি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পাশাপাশি পরীক্ষাগারগুলোকে নিজস্ব ভবনের বাইরে অন্য বুথ থেকে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ বন্ধেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সাময়িকভাবে বন্ধ হওয়া পরীক্ষাগারগুলো হলো- সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার, স্টিমজ হেলথ কেয়ার, আল জামী ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেডের মিরপুর শাখা। করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করে ভুয়া রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে এই ব্যবস্থা নেয়া হলো বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমুহ) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা জানান। তিনি বলেন, বিদেশগামীদের নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম করছিল এসব প্রতিষ্ঠান। এসব অভিযোগ পাওয়ার পর তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলেছি। এছাড়া নমুনা পরীক্ষার অনুমতি পাওয়া অন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলো বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তার স্বাক্ষরে এসব নির্দেশনা বুধবার পাঠানো হয়েছে বেসরকারি পরীক্ষাগার ও হাসপাতালে। চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদেশগামী যাত্রীদের ভুয়া কোভিড-১৯ রিপোর্ট দেওয়াসহ বেশকিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ধরনের অনৈতিক কর্মকা- জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং দেশের ভাবমূর্তি ভয়ংকরভাবে ক্ষুণœ করেছে।
নির্দেশনা :
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহের জন্য ল্যাবগুলোর নিজস্ব ভবনের বাইরে স্থাপিত সব ধরনের নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা কোনো অবস্থাতেই বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা যাবে না। বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা সংগ্রহের সময় মূল পাসপোর্ট যাচাই করে, পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখসহ নমুনা সংগ্রহ ফরম পূরণ করতে হবে। কোনোক্রমেই পাসপোর্টের ফটোকপি গ্রহণযোগ্য হবে না। বিমানবন্দরে বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা সনদ, পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে যাচাই করা হবে। শুধু টেলিফোন/মোবাইল নম্বর প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না। সাত দিনের মধ্যে কোনো পজিটিভ রিপোর্ট থাকলে ওই যাত্রীকে দেশত্যাগের অনুমতি দেওয়া যাবে না। কোনো বিদেশগামী যাত্রী কোভিড-১৯ পজিটিভি হলে, সে কমপক্ষে সাত দিন পর শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ল্যাবে পুনরায় পরীক্ষা করাবেন এবং পরবর্তী সময় যদি নেগেটিভ সনদ পান, সেক্ষেত্রে দেশত্যাগ করতে পারবেন। কোনো আরটি-পিসিআর ল্যাবের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ উঠলে ল্যাবটির কার্যক্র সাময়িকভাবে স্থগিত করা হবে। তদন্ত করে পরবর্তী অনুমোদনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। কোনো বিদেশগামী যাত্রীর কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উভয় স্থানে প্রথমে পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে যাচাই করে দেখতে হবে যে সে গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অন্য কোথাও আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করেছে কিনা। করে থাকলে এবং পজিটিভ হলে তাকে সাত দিন পর্যন্ত পুনরায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করার সুযোগ দেওয়া যাবে না। গত বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসে আটকা পড়েছেন অন্তত দেড় লাখ বাংলাদেশি। তাদের ফেরার ক্ষেত্রে ‘করোনাভাইরামুক্ত’ সনদ থাকা বাধ্যতামূলক করে দেয় বিভিন্ন দেশ। ফলে গত বছরের ২০ জুলাই ঢাকায় জেলা সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটের অস্থায়ী কোভিড-১৯ আইসোলেশন সেন্টারে বিদেশগামীদের নমুনা পরীক্ষা সংগ্রহ করে পরীক্ষার সনদ দেওয়া শুরু। পরে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও পরীক্ষাগারকেও নমুনা পরীক্ষার অনুমতি দেয় সরকার।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply