হেলাল মজুমদার ভেড়ামারা ॥ জীবন এবং জীবিকা সকলের একভাবে চলে না। জীবন নদীর গ্রোতের মত প্রবাহমান।মানুষ তার সামর্থ ও যোগ্যতা অনুয়ায়ী বিভিন্ন শ্রেণীপেশার সাথে যুক্ত। বলছি ভেড়ামারা মধ্যবাজারের কুব্বাত সুপার মার্কেটের সামনের ফুটপাতে চা বিক্রি করা মোঃ মোস্তফা আলী” মস্তানের “কথা ।যার তৈরী করা চায়ের স্বাদ ভেড়ামারা শহরবাসির আস্হার জায়গা তৈরী করেছে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে হালিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও হালিমা সুপার মার্কেটের দক্ষিণপার্শ্বে কুব্বাত সুপার মার্কেটে ঢাকা ডেন্টালের সামনে খোলা জায়গায় একটি চালা স্হাপন করে সকাল ৭ টা থেকে রাত ১০ টা অবধি চলে পপুলার চা বিক্রেতা মস্তানের চা বিক্রি। মস্তানের চা এর সুখ্যাতি থাকায় স্কুল কলেজের ছাত্র,ব্যবসায়ী, ডাক্তার, চাকুরীজীবি, পথিক সকলেই তার তৈরী করা চায়ের ভক্ত ও ক্রেতা।সকাল থেকেই সিরিয়াল অনুসারে তার চা প্রদান শুরু হয়, একটু দেরীতে সহাস্যে বিনয়ী স্বরে অপেক্ষার কথা কাষ্টমার বিরক্তির কারণ হয়না কোন সময়।সদা হাস্যজ্বল মস্তান কাষ্টমারের রুঢ় আচরণে কখনই বিরক্ত প্রকাশ করে না।এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকালে তিনি তার চা বিক্রির কাহিনী, সংসারের সুখ দুঃখ, হাসি কান্নার কাহিনী অবলীলায় উপস্হাপন করেন। ভেড়ামারা উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়নের সাতবাড়ীয়া গ্রামের মৃত ওমর আলীর চার সন্তানের সর্ব কনিষ্ট মোস্তফা আলী মস্তান।বাবার অভাবের সংসারে তার বেড়ে উঠা যে কারণে ছোটবেলা থেকেই বাবাকে সহায়তা করতে শিশুশ্রম বিক্রি করতে হয় তাকে। তার স্বাদ ছিলো লেখাপড়া শিখে মানষের মত মানুষ হওয়া কিন্তু বিধিবাম, দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করতে করতে তার সে স্বপ্ন সাধ পূরণ হয়নি কোনদিন।
মস্তান ১৯৯৫ সাল থেকে টানা ২৭ বছর চা বিক্রি পেশার সাথে যুক্ত।সারাদিন চা বিক্রি করে তার কোনদিন ১৫০০ আবার কোনদিন ১২০০ কোনদিন ১০০০ টাকা লাভ হয়। আর এ লাভের টাকা দিয়েই চলে তার অভাবের সুখের সংসার। ব্যাক্তি জীবনে মস্তানের ২ ছেলে, ১ মেয়ে ও ১ স্ত্রী নিয়ে বসবাস।বাড়িঘর তেমন নির্মাণ না করতে পারলেও মস্তান তার ঘুণেধরা স্বপ্ন সাধ ছেলেমেয়েদের দিয়ে পূরণ করতে চান।তাইতো তিনি ছেলেমেয়েদের করে তুলেছেন স্কুলমুখী।তার বড় মেয়ে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী। বড় ছেলে অনিক হোসেন ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের একাদশ শ্রেণীর এবং ছোট ছেলে ভেড়ামারা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। জীবন সংগ্রামে বহু ঘাত- প্রতিধাতের সাথে যুদ্ধ করা মস্তান তার ঝুঁপড়ি দোকানটি বড় করতে চান, এজন্য তার বড় পুঁজি দরকার যা তার স্বাধ পূরণে বড় অন্তরায়। ভেড়ামারা চা বিক্রেতা মস্তানের জীবনের গল্পের শেষ এখানেই নয়। তার সন্তানরা হতে পারে তার স্বপ্ন সাধ পূরণের বড় হাতিয়ার।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply