ঢাকা অফিস ॥ ঢাকার মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে দগ্ধ ভ্যানচালক মো. নুরুন্নবী চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হার মানলেন। ৩৫ বছর বয়সী নুরুন্নবী ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিউটের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে জানান আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল। এর আগে বুধবার সকালে মারা যান ২৫ বছর বয়সী ইমরান হোসেন, যিনি বিস্ফোরণে ধসে পড়া রাখি নীড়ের নিচতলায় বেঙ্গল মিটের বিক্রয়কেন্দ্রে কাজ করতেন। চার দিন আগের ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় এ নিয়ে মোট ১০ জনের মৃত্যু হল। বার্ন ইনিস্টিউটের আইসিইউতে ভর্তি আছেন মো. রাসেল নামে ৩১ বছর বয়সী আরেক যুবক, যিনি বেঙ্গল মিটে ইমরানের সহকর্মী ছিলেন। পার্থ শঙ্কর পাল বলেন, ইমরান ও নুরুন্নবীর মত রাসেলেরও শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে মগবাজার ওয়্যারলেস গেইট এলাকা কেঁপে ওঠে। তাতে আউটার সার্কুলার রোডের ৭৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের তিনতলা রাখি নীড়ের ধসে পড়ার দশা হয়। বিস্ফোরণের ধাক্কায় রাস্তার উল্টো দিকে আড়ং, বিশাল সেন্টার, নজরুল শিক্ষালয়, রাশমনো হাসনপাতালসহ আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাচ ভেঙে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাস্তায় থাকা তিনটি বাস ও যাত্রীরা। ওই ঘটনায় আহত হন চার শতাধিক, তাদের বেশিরভাগই সে সময় রাস্তায় বা আশপাশের ভবনে ছিলেন। তাদের অধিকাংশই বিস্ফোরণের ধাক্কায় ছিটকে যাওয়া কাচে আহত হন। ফায়ার সার্ভিস বলেছে, তিনতলা ওই ভবনে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছে। তবে কেন, কীভাবে ওই বিস্ফোরণ ঘটল, সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু কেউ বলেননি। বিস্ফোরণের পর সেই রাতেই মোট সাতজনের মৃত্যুর কথা জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। পরদিন তাদের লাশ হস্তান্তর করা হয় পরিবারের কাছে। সেই সাতজন হলেন- কলেজ শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান (২৬), প্রাইভেটকারচালক স্বপন (৩৯), বাসচালক আবুল কাশেম মোল্লা (৪৫), বেসরকারি চাকরিজীবী রুহুল আমিন (৩০), ভবনের নিচতলায় থাকা শরমা হাউজের পাচক ওসমান গনি তুষার (৩৫), সেখানে খেতে যাওয়া জান্নাত বেগম (২৩) এবং তার নয় মাসের মেয়ে সোবহানা। বিস্ফোরণের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন আংশিক ধসে পড়া রাখি নীড়ের তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশিদ হাওলাদার। মঙ্গলবার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। বৃহস্পতিবার ভোরে মারা যাওয়া নুরুন্নবী রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার হাবাজপুর গ্রামের ইসলাম ম-লের ছেলে। ঢাকায় এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল এলাকার একটি মেসে তিনি থাকতেন। আবদুল্লাহ নামের ছয় বছরের একটি ছেলে রয়েছে তার। নুরুন্নবীর স্ত্রী পপি বেগম জানান, ভ্যান চালিয়ে বাড্ডা থেকে ফেরার পথেই মগবাজারে বিস্ফোরণের মধ্যে পড়েন তার স্বামী। আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেঙ্গল মিটের কর্মী রাসেলের পরিবার ঠাকুরগাঁওয়ে থাকে, বাবা কৃষক। লেখাপড়া করেছেন ঢাকায় চাচা মানারুল হকের কাছে থেকে। মানারুল হক বলেন, আমিই লালনপালন করেছি। ছেলেটা আর বাঁচবে না ভাবলে কিছু ভালো লাগতেছে না। সহ্য করা মুশকিল।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply