ঢাকা অফিস ॥ মালয়েশিয়ার শাস্তির বিধান থেকে উঠে যাচ্ছে মৃত্যুদ-। নির্দিষ্ট কিছু অপরাধের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক যে মৃত্যুদ- দেয়ার বিধান তা বিলোপ করবে দেশটি। সেই জায়গায় বিচারকদের জন্য সঠিক ও বিবেচনাপ্রসূত শাস্তি ঠিক করার সুযোগ নিশ্চিত করবে। গতকাল শুক্রবার এক ঘোষণায় এ কথা জানিয়েছে মালয় সরকার। মানে ১১টি নির্দিষ্ট অপরাধের জন্য বাধ্যতামূলক মৃত্যুদ- দেয়া হয়। এসব অপরাধের বিকল্প শাস্তি কী হতে পারে, তা নিয়ে সম্প্রতি একটি বিশেষজ্ঞ রিপোর্টের ফলাফল পর্যালোচনার পর মৃত্যুদ-ের বিধান নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে মালয় সরকার। মালয়েশিয়ার আইনমন্ত্রী ওয়ান জুনাইদি তুয়ানকু জাফর এক বিবৃতিতে বলেন, মারাত্মক ১১টি অপরাধের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক মৃত্যুদ-ের বদলে আদালতের নির্দেশনায় ‘বিকল্প শাস্তি’র বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এর সঙ্গে আরও ২২টি অপরাধের ক্ষেত্রে যে মৃত্যুদ- দেয়া হয় সেগুলোর প্রতিও নজর দেয়া হবে। ওয়ান জুনাইদি বলেন, এতে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার উন্নতিতে দেশের নেতৃত্বের স্বচ্ছতা প্রতিফলিত হবে। সেই সঙ্গে সব পক্ষের মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। আইনমন্ত্রীর বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এজন্য সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করা হবে। মাদক সংক্রান্তসহ যেসব অপরাধের জন্য মৃত্যুদ-ের বিধান রয়েছে সেগুলোর জন্য বিকল্প সাজা কী হতে পারে, তা নির্ধারণে আরও গবেষণা করা হবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের মতো মালয়েশিয়ার মাদক আইন অত্যন্ত কঠোর। পাচারকারীদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রয়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ সরকারের আমলে মৃত্যুদ- বিলোপোর প্রথম পদক্ষেপ নেয় মালয়েশিয়া। সেই থেকে মৃতুদ- কার্যকর স্থগিত রয়েছে। তবে মৃত্যুদ- কার্যকরের আইনগুলো রয়ে গেছে। এ ছাড়া আদালতে দোষী সাব্যস্ত মাদক পাচারকারীদের বাধ্যতামূলক মৃত্যুদ- কার্যকর করার বিধানও রয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর রিপোর্টমতে, বর্তমানে ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ মৃত্যুদ-ের অপেক্ষায় রয়েছে। এদের বেশির ভাগই মাদক মামলায় অভিযুক্ত। জাতিসংঘের অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব দেশে এখনো মৃত্যুদ-ের বিধান রয়েছে, তাদের বিধানটি ‘মারাত্মক ধরনের অপরাধ’-এর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা উচিত। এদিকে মালয়েশিয়ার মৃত্যুদ- বিলোপের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো। কর্মকর্তারা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত মালয়েশিয়া ও এ অঞ্চলের জন্য একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’। এশিয়া অঞ্চলের মানবাধিকার সংস্থা দ্য অ্যান্টি-ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক (এডিপিএএন) মালয় সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, বাধ্যতামূলক মৃত্যুদ- ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে না। বরং প্রত্যেক দোষীর সার্বিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে শাস্তি নির্ধারণে বিচারকদের বঞ্চিত করে।
Leave a Reply