॥ আলহাজ্ব আব্দুম মুনিব ॥
জাতীয় কবি নজরুলের সেই অমর গান “ও মোর রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ” মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা পর রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে আগত মাহে রমজানের প্রতিদান পূর্ণতা পায় ঈদুল ফিতরে। ঈদুল ফিতর রোজাদারদের জন্য পার্থিব নগদ উপহার। আর উপহার ও আনন্দ মানেই খুশির। এজন্য ঈদুল ফিতর মুসলমানদের অন্যতম খুশির উৎসব।
পবিত্র মাহে রমজান মুমিন বান্দাদের জন্য একটি পরীক্ষা। যারা এ পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হবেন, তাদের জন্য মহান প্রভুর পক্ষ থেকে রয়েছে বিশেষ প্রতিদানের ঘোষণা। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘ঈদুল ফিতরের দিন সকালে আল্লাহতাআলা ফেরেশতাদের পাঠিয়ে দেন। তারা দুনিয়াতে ছড়িয়ে পড়েন এবং গলিপথের মুখে দাঁড়িয়ে আওয়াজ করে ঘোষণা দিতে থাকেন, হে উম্মতে মোহাম্মদি! তোমরা তোমাদের দয়াময় রবের প্রতি মনোনিবেশন করো। অফুরন্ত ভান্ডার থেকে তিনি তোমাদের দান করবেন। বড় বড় গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ এরপর লোকজন যখন নামাজের স্থানে পৌঁছে, আল্লাহতায়ালা তখন ফেরেশতাদের সম্বোধন করে বলেন, ‘ওই মজদুরদের কী বিনিময় হতে পারে, যারা তাদের কাজ সম্পন্ন করেছেন?’ ফেরেশতারা বলেন, তাদের বিনিময় হচ্ছে পুরোপুরি পাওনা তাকে দিয়ে দেওয়া। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা সাক্ষী থাকো, রমযানের রোযা ও রমযানের রাতের নামাযের প্রতিদান হিসেবে আমি তাদের আমার সন্তুষ্টি ও ক্ষমা দান করলাম এবং তাদের গোনাহগুলো নেকির দ্বারা পরিবর্তন করে দিলাম।’
ঈদুল ফিতর মুসলমানদের আনন্দের উৎসব। তবে মুসলমানদের আনন্দ-উৎসব নিছক আনন্দের জন্যই না, তা একটি ইবাদতও বটে। এজন্য মুসলমানদের তাদের ধর্মীয় উৎসবগুলো পালন করতে হয় ধর্মীয় আঙ্গিকে। বেহায়াপনা, গান-বাজনা বাজিয়ে লাগামহীন আনন্দ-ফুর্তিতে মেতে ইসলামের চেতনা ও আদর্শকে ভুলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঈদুল ফিতরের দিন করণীয় হলো, সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা, ভালো করে গোসল করে সুগন্ধি লাগানো, ঈদগাহে যাওয়ার আগে রাসুল(সাঃ)-এর সুন্নত অনুসরণে মিষ্টিমুখ করে ঈদগাহে যাওয়া, ঈদের জামাতে শামিল হওয়া এবং পুরো খুতবা শোনা।
ঈদের দিনের দোয়া আল্লাহতায়ালার দরবারে কবুল হয়। এ দিনের ইবাদতেরও বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। সম্ভব হলে ঈদের জামাত পড়ে ঘরে ফিরে চার রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নেবেন। আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত এ দিনের বিশেষ আমল। ঈদপূর্ব রাতটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। আনন্দ-ফুর্তির তোড়ে ঈদের ভাবগাম্ভীর্য যেন নস্যাৎ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেকেই ঈদের দিন নানা বাজে কাজে জড়িয়ে পড়েন। এটা ঈদের পুরস্কার প্রাপ্তির পথে বড় অন্তরায়। সংযমের যে শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সারা মাস রোজা রেখেছেন সে মাসের ছাপ থাকতে হবে ঈদ উদযাপনে। সঠিকভাবে রমযান পালন ছাড়া ঈদের আনন্দ যে পুরোপুরি তাৎপর্যহীন তা অনেকেই বুঝতে পারে না। ঈদুল ফিতরের মূল তাৎপর্য কতই না চমৎকার। ঈদুল ফিতরের দিন রোযাদারদের আনন্দের দিন। আর তাদের জন্যই ঈদ পুরস্কার হিসেবে আসবে যারা পরিপূর্ণ হক আদায় করে রোযা রাখে। পুরো রমযান মাসব্যাপী কে কতটা নিষ্ঠা সহকারে সিয়াম সাধনা করতে পারল, রমযানের রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সুযোগ গ্রহণ করতে পারলো, নিজের আমলনামা ভারী করার সাথে সাথে গুনাহগুলো মাফ করিয়ে নিতে পারল এটাই হতে পারে আনন্দ পরিমাপের মাপকাঠি। মহান আল্লাহ আমাদের তার প্রিয় বান্দা হিসেবে কবুল করুন। তথ্য-সংগ্রহ।
লেখক ঃ কামিল (আল হাদিস) মাস্টার্স (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।