নিজ সংবাদ ॥ পিঠমোড়া করে দড়ি দিয়ে বাধা। সেই দড়ি ধরে শালিসের মাঝে নিয়ে গেলেন ইউনিফর্ম পরিহিত এক গ্রামপুলিশ রফিকুল ইসলাম। শালিস বৈঠকে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ মাতব্বরেরা বসে আছেন। অন্তত ১০০ ছোট বড় উৎসুক মানুষও ঘিরে আছে।
এরপর একজন বলে উঠলেন, ‘দশের রায় ৩০ বেত মারার দায়িত্ব আমার ওপর পড়েছে, এটা এখন মারা হবে।’ এসময় সকলে চিৎকার করে তাকে সম্মতি দেন। শুরু হয় বেতের লাঠির আঘাত। একে একে মারতে থাকলে উৎসুক জনতা মারের সংখ্যা গণনা করতে থাকে। ২০টি আঘাতের একপর্যায়ে যুবক মাটিতে পড়ে যায়। তবুও আঘাত চলতে থাকে। এদৃশ্যের ১ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিওক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত রোববার সকালে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নের আসাননগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এর একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ এক ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নওয়াব আলীসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়েছে।
এব্যাপারে জানতে মালিহাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের সাথে কথা হলে তাঁর ভাষ্যমতে, ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের সেন্টু আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৫) একই এলাকার এক গৃহবধূর (২২) সঙ্গে সম্পর্ক হয়। পরকীয়ার অভিযোগে গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে তাকে ওই গৃহবধূর স্বজনেরা আটক করে। সে সময় ওই গৃহবধূকেও আটক করা হয়। পরে রাতেই তাদের ওই ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নওয়াব আলীর আসাননগর গ্রামের বাড়িতে আটকে রাখা হয়।
পরে রোববার সকাল ১০টার দিকে ওই ইউপি সদস্যের বাড়ির সামনেই শালিস বসে। শালিসে ইউপি সদস্য নওয়াব আলীসহ স্থানীয় আরও কয়কজন মাতব্বর উপস্থিত ছিলেন। এবং সেখানে অন্তত ১০০ ছোট বড় মানুষও ছিলেন। শালিস বৈঠকে সাইফুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে বেতের লাঠির ৩০ আঘাত, গলায় জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম ঘোরানো ও ৩ হাজার টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত হয়।
গ্রামপুলিশ রফিকুল ইসলাম বলেন, সকালে তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। ইউপি সদস্য ডেকে বলেন দুইজন আসামী ধরা হয়েছে। তাঁর বাড়ির সামনে সালিশ বৈঠক হবে। এজন্য গ্রামের মানুষকে ডাকতে হবে। এরপর তিনি মানুষ জড়ো করেন।
বৈঠক সম্পর্কে গ্রাম পুলিশ রফিকুল ইসলাম বলেন, বৈঠকে ইউপি সদস্য নওয়াব আলী সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্তমতে যুবককে বেতের লাঠি পেটা করেন নওয়াব আলী। এরপর সেন্ডেলের মালা পরিয়ে পাড়ায় ঘোরানো হয়। জরিমানার ৩ হাজার টাকা ইউপি সদস্যের কাছে রাখা হয়।
এছাড়াও শালিসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইউপি সদস্য নওয়াব আলী একটি স্ট্যাম্প পেপার নিয়ে এসে তাতে তালাক নামা লিখে গৃহবধুর স্বাক্ষর নেন। এরপর ওই গৃহবধূ তাঁর বাবার বাড়ি চলে যান।
গ্রাম পুলিশ হয়ে পুলিশকে কেন জানালেন নাÑএমন প্রশ্নে রফিকুল ইসলাম বলেন,‘ঝামেলা না করতে এবং পুলিশকে জানাতে ইউপি সদস্যকে বারবার বলা হয়েছিল। কিন্তু আমাকে ধমক দিয়ে রাখা হয়।’
ইউপি চেয়ারম্যান জানান, যুবক সাইফুল ইসলাম কৃষি শ্রমিক। তার একাধিক বিয়ের ঘটনা আছে। যে গৃহবধূর সাথে পরকীয়ার অভিযোগ আনা হচ্ছে তার স্বামী ঢাকাতে আনসারের চাকুরি করে।
মিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শুভ্র কান্তি দাস বলেন, ‘ইউপি সদস্যসহ তিনজনকে থানায় নেওয়া হয়েছে। যুবককেও ডাকা হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও একই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফীন বলেন,‘ভিডিওটি আমি দেখেছি। এটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ ব্যাপারে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। দলীয়ভাবেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সেখানে উপস্থিত ছিল কিনা সেটা ভিডিওতে দেখা যায়নি।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply