মেহেরপুর প্রতিনিধি ॥ জেলার বাজারে এখন আউশ ও আমন জাতের কচুতে ভরপুর। স্থানীয়ভাবে আউশ-আমন কচুর ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে। এ কারণেই মেহেরপুরের নামানুসারেই কচুর নামকরণ হয়েছে মেহেরচন্ডি মুখি। জেলার বাইরেও বাজারজাত হচ্ছে এ কচু। বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও ভালো উৎপাদন এবং বেশি দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। বাজারে আউশ মেহেরচন্ডিমুখি কচু ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মেহেরচন্ডিমুখি আমন কচু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। মেহেরপুর থেকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ ট্রাক কচু দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করা হচ্ছে। মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসাবমতে, জেলায় ২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে কচুর চাষ হয়েছে। উৎপাদন, কচু ধোওয়া এবং সরবরাহ পর্যায়ে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। কচুর চাষে তাদের কর্মসংস্থান হয়েছে। সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া, আমদহ, পিরোজপুর, বুড়িপোতা ইউনিয়ন; গাংনী উপজেলার সাহারবাটি, কাথুলী, ধানখোলা ইউনিয়ন; মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী, বাগোয়ান, মহাজনপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মাঠে মাঠে কচুরচাষ দেখা গেছে। মেহেরপুরের নামানুসারে চাষ হওয়া ‘মেহেরচন্ডি মুখি কচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ কচুর আবাদ দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। অনেকেরই ভাগ্য বদল করেছেন এ কচুচাষে। জেলায় এ কচুর আবাদ বেশি, মাটিরগুণে এখানকার কচু সুস্বাদু বলে কৃষি ও মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। গোভীপুর গ্রামের মেহেরচন্ডি মুখি কচুচাষী আব্দুল বাতেন বলেন আমি চার বছর ধরে কচুর চাষ করে আসছি। এ বছর তিন বিঘা জমিতে কচুর চাষ করেছি। এ বছর কচুর ফলন ভাল হওয়ায় খরচ বাদে ৭০-৮০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা করছি। গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের কচু চাষী মেহের আমজাদ অভিন্ন সুরে বলেন মেহেরচন্ডি কচু চাষ করে তাদের ভাগ্য বদলেছে। তাদের দেখা দেখি অনেকেই এখন কচু চাষ করছে। তিনি আরও জানান জমি থেকেই ব্যবসায়ীরা কচু কিনে নিয়ে যায়। এজন্য তাদের শ্রম ও সময় বেঁচে যাওয়াত প্রতিবছর কচু চাষ করেন। ব্যবসায় ওয়াজেদুল হক জানান, তিনি মেহেরচন্ডি কচু মেহেরপুর থেকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করেন। এখানকার মাটিরগুণে কচু সুস্বাদু এবং এ কচুর ব্যাপক চাহিদা। বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি থেকে মেহেরচন্ডি আউস কচু বাজারে আসতে শুরু করে। শ্রাবণের মধ্যসময় থেকে বাজারে আসে আমন কচু। সুস্বাদু হওয়ায় আমন কচুর চাহিদা বেশি। চাষিরা জানান, মাঘ-ফাল্গুন মাসে কচুর চাষ শুরু হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর প্রতিবিঘা কচু চাষে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর প্রতিবিঘায় ৫০ থেকে ৬০ মণ কচু হয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ আউস কচু ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মণ দরে বিক্রির পাশাপাশি অনেক চাষি পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে ক্ষেত বিক্রি করে দিচ্ছেন। জেলা খামার বাড়ির উপ পরিচালক কামরুল হক মিয়া জানান- ২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে কচু চাষ হয়েছে। এই জেলায় ব্যাপক কচুচাষের কারণেই কচুর নামকরণ হয়েছে মেহেরচন্ডি মুখি কচু। এই নামে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ মেহেরপচন্ডি কচুর খোঁজ করেন। এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকার কারণে সেচ খরচ বেঁচে গেছে চাষীদের। ফলে লাভের পরিমান বেড়েছে।