আ.ফ.ম নুরুল কাদের ॥ রমজান মাসকে কুরআন নাজিলের মাস বলা হয়। তাইতো রমজান মাস অন্য সব মাস অপেক্ষা উত্তম এবং গুরুত্ববহ। রমজান ওই মাস, যে মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে। বাকারা : ১৮৫। নিশ্চয়ই আমি কুরআনকে কদরের রাতে নাজিল করেছি। কদর : ১। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিশ্বমানবতার মুক্তির জন্য আল কুরআন নাজিল করেছেন। কুরআনের সর্বপ্রথম বাণী হলো জ্ঞানার্জনের। ‘পড়ো তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ সূরা আলাক : ১। রবের নামে পড়তে হলে সর্বপ্রথম কুরআন পড়তে হবে। এ কুরআনের জ্ঞানার্জন ছাড়া আল্লাহর পরিচয় জানা কখনো সম্ভব নয়। আল্লাহ কেন আমাদের সৃষ্টি করে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন তা বুঝাও অসম্ভব। কুরআনের শিক্ষা ছাড়া আল্লাহর পক্ষ থেকে যে বিধান নাজিল হয়েছে তার নিয়মকানুন সঠিকভাবে জানা এবং সে অনুযায়ী পথ চলাও সম্ভব নয়। রাসূল সা: বলেছেন, ‘ইলম-ই-দ্বীন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ।’ (বুখারি শরিফ)। কুরআন শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষের জীবন সুন্দর ও আদর্শবান হয়। এ কুরআনের সংস্পর্শে আসার কারণে জাহিলিয়াতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোকগুলো ইসলামের শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত হয়েছিল। এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ হজরত ওমর রা:। মুহাম্মদ সা: এ কুরআনের শিক্ষার মাধ্যমে উপহার দিয়েছেন সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত এক আদর্শ সমাজ।
আমরা যদি কুরআন শিখে সঠিক পথে ফিরে আসি তাহলে আজো সমাজের শ্রেষ্ঠ ও আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারব। কিন্তু কুরআন শিখব কিভাবে? এটা অনেকেরই প্রশ্ন। কেউ বলেন, কুরআন শিক্ষা করা তো খুব কঠিন। অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি কুরআনকে বোঝার জন্য সহজ করে দিয়েছি। (সূরা কামার : ১৭)। আসলে কুরআন শিক্ষা করা কঠিন নয়। আল্লাহ তো নিজেই বলেছেন সহজ’। কিন্তু আমরা না বোঝার কারণে খুব কঠিন মনে হয়। আপনারা একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন কুরআন যদি কঠিন হতো তাহলে সাত-আট বছরের ছোট ছেলেমেয়েরা কি মুখস্থ করতে পারত? পৃথিবীতে প্রায় দুই কোটি কুরআনের হাফেজ রয়েছেন। পৃথিবীতে যত ধর্মগ্রন্থ ও বড় বড় সাহিত্য রয়েছে, কোনো সাহিত্য বা ধর্মগ্রন্থ কি কেউ সম্পূর্ণ মুখস্থ করতে পেরেছে? অথচ আল্লাহর রহমতের কারণে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করা ছোট ছেলেমেয়েদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় কুরআন শিক্ষা করা সহজ। তিনি বলেন, আমি এ কুরআনকে নাজিল করেছি এবং এর সংরক্ষণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমার। বর্তমানে আপনি (বয়স্করা) আধুনিক পদ্ধতিতে ১৫ থেকে ৩০ দিনে এবং শিশু-কিশোররা তিন-ছয় মাসে কুরআন শিখতে পারবেন। কিন্তু আমরা বেশির ভাগ মুসলমান এই কুরআন পড়তে জানি না এবং পড়ার চেষ্টাও করি না। এর চেয়ে হতাশা ও দুঃখের কথা আর কী হতে পারে। বাংলাদেশের শতকরা ৯০ জন মুসলমানই সঠিকভাবে কুরআন পড়তে জানে না। আর যারা পড়তে পারেন তাদের একাংশও শুদ্ধ করে সুন্দরভাবে তাজবিদ অনুযায়ী পড়তে পারেন না। রমজান মাস এলেই খতমের সুর বেজে ওঠে। অনেকে বলে : আমি পাঁচ খতম দিয়েছি কিন্তু কী পড়েছে তা নিজেও জানেন না। বাবা-মা মৃত্যুবরণ করলে অন্যকে ডাকে কুরআন পড়তে, কিন্তু নিজে পড়তে পারে না। এ কুরআনের অর্থ আমরা জানি না, বুঝতেও চেষ্টা করি না। অথচ আজ যারা পৃথিবী পরিচালনা করছে তারা কুরআন গবেষণা করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নত শিখরে পৌঁছে গেছেন। কুরআন শুদ্ধভাবে পড়তে না পারলে নামাজ তো হবেই না, বরং গুনাহ হবে। রাসূল সা: বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি যে নিজে কুরআন শিখে এবং অপরকে শেখায়। -বুখারি শরিফ। আর এ কুরআন শিখতে হবে শুদ্ধভাবে। তোমরা শুদ্ধ করে ধীরে ধীরে কুরআন তিলাওয়াত করো।-সূরা মুজ্জাম্মিল। আসুন আমরা শুদ্ধভাবে কুরআন শিখি এবং অপরকে কুরআন শেখানোর জন্য উৎসাহিত করি। কুরআনের শিক্ষা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিই। রমজান মাসে বেশি পরিমান কোরআন তেলাওয়াতের কথা ওলামাগণ বলেন। কেননা রোজা রেখে কোরআন তেলাওয়াতে বেশি নেকী তাই আমরা এই সময়টা ভালভাবে কাটাতে পারি সেই চেষ্টা সকলের জন্য প্রয়োজন।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply