আ.ফ.ম নুরুল কাদের ॥ কাঙ্খিত ও মর্যাদা সম্পন্ন দিনটি যে কোন রোজাদারের জন্য কাম্য। রমজানের পুরো এক মাস তিনটি পর্বে বিভক্ত। প্রথম ১০ দিন রহমত, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাত এবং তৃতীয় ১০ দিনকে নাজাতের সময় বলা হয়। এ মাসে আমরা আল্লাহর কাছ থেকে অশেষ রহমত ও করুণা লাভের সুযোগ পাই। আমাদের অতীতের গুনাহগুলো মাফ করে দেয়ার সুযোগ দিয়েছেন বিশ্বজাহানের প্রতিপালক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। এক মাস রোজা পালনের মাধ্যমে আমরা আমাদের আখেরাতের জীবনে শান্তি লাভের পথ প্রশস্ত করতে পারি। মহান আল্লাহ তায়ালা রমজানের রোজাকে সব মুসলমান নরনারীর ওপর বাধ্যতামূলক করার আদেশ করেছেন হিজরি দ্বিতীয় সালে। কুরআন পাকে সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ পরে রাসূলে করিম সা: নিজেও রোজা পালনের গুরুত্ব এবং ফজিলত সম্পর্কে আমাদের অবহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে এবং এমনিভাবে রাতে ইবাদত করে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘রমজান মাস ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের বিনিময় হচ্ছে বেহেশত।’ অপর এক হাদিসে রাসূল সা: বলেছেন, ‘মাতৃগর্ভ থেকে শিশু যেমন নিষ্পাপ হয়ে ভূমিষ্ঠ হয়, রমজানের রোজা পালন করলে মানুষ ঠিক তেমন নিষ্পাপ হয়ে যায়।’
রোজার দিনে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময় মতো জামাতের সাথে আদায় করার পরও রাতে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করতে হয়। নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত বেশি বেশি করা হয়। তারাবি রোজার মাসে বাড়তি ও বরকতময় ইবাদত। তারাবির নামাজ আমাদের সবার জন্য সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। খতম তারাবিতে বাড়তি সওয়াব, যদি সম্ভব না হয় সূরা তারাবি পড়তে হবে। এ মাসে দিনের নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে পড়লে অনেক গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। প্রত্যেক নেক আমলের পুরস্কার ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত দেয়া হবে। আমলের মান অনুযায়ী নামাজের মানকে যাতে উন্নত করা যায় সে বিষয়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। পবিত্র এ রোজা-রমজানের দিনে আমরা সারা দিন উপবাস থেকে সিয়াম সাধনা করি এবং শেষ রাতে উঠে সেহরি খাই। রোজার দিনে আমরা ইচ্ছা করলেই বেশি দান-খয়রাত করার চেষ্টা করতে পারি। এ সময়ের দানকে অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি বরকতময় বলা হয়েছে।
এভাবে মাসব্যাপী কমপক্ষে রোজার মাসে মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের যে চেষ্টা আমরা করব তাতে আমাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ, মমত্ববোধ ও সহানুভূতির গুণ সৃষ্টি হবে। আর এ গুণ আমাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ও সুন্দর মানুষে পরিণত করতে সহায়তা করবে। এভাবেই আমরা আল্লাহর পছন্দনীয় বান্দা হিসেবে গণ্য হবো। রমজান মাস আত্ম রক্ষার মাস। এ মাস ধৈর্য ও সহনশীলতার মাস। এ মাস ইবাদতের মাস। রমজান সমাজের অন্যান্য মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বোঝা ও লাঘব করার মাস। সর্বোপরি, মাহে রমজান পবিত্রতা অর্জন করে আখেরাতে মুক্তি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাস। তাই আসুন, সবাই মিলে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করি। এ মাসকে নিজেদের গড়ে তোলার প্রশিক্ষণের মাস হিসেবে গ্রহণ করি, যাতে সেই প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান দিয়ে বাকি ১১ মাস চলতে পারি। যাতে ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত হয়।
Leave a Reply