1. admin@andolonerbazar.com : : admin admin
  2. andolonerbazar@gmail.com : AndolonerBazar :
শিরোনাম :
চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড উপজেলা ভোট ব্যর্থ হলে ৭ জানুয়ারির প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র ব্যর্থ হবে : সিইসি মাথার উপর পিলার ভেঙে পড়ে  খোকসায় ৪ বছরের শিশুর মৃত্যু কুমারখালীর সেই সড়কের গাছকাটা বন্ধ করল এমপি রউফ আমাদের অবশ্যই যুদ্ধকে ‘না’ বলতে হবে : প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ড তাপদাহে মানবিক কার্যক্রমে কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটি শ্রমজীবি মানুষের পাশে  শৈলকুপায় বৃষ্টি জন্য ইস্তিসকার নামাজ আদায় আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাসিক আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা কুমারখালী হাসপাতালে ৩৩ টি আধুনিক মানের বেড প্রদান শেষে বৃক্ষরোপণ; হাসপাতালে সেবার মান বাড়ানোর তাগিদ দিলেন এমপি আব্দুর রউফ দৌলতপুর সীমান্তে বিদেশী পিস্তুল, গুলি ও মাদকসহ অটক-১

রমজান মাসের রোজার তাৎপর্য ও গুরুত্ব

  • সর্বশেষ আপডেট : শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

 

আ.ফ.ম নুরুল কাদের ॥ রোজা শব্দটি ফারসি ভাষা হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। এ শব্দটির আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘সওম’। সওমের আভিধানিক অর্থ হলো ‘বিরত থাকা’ বা ‘বর্জন করা’। শরিয়াহর পরিভাষায় ‘সুবহে সাদেক’ থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকার নাম ‘সওম’ বা ‘রোজা’। রোজা ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। নামাজের পরই এর স্থান। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক ও দৈহিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিম নর-নারীর ওপর রোজা রাখা ফরজ। এ প্রসঙ্গে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন পবিত্র কুরআন শরিফে ঘোষণা করেছেন, ‘ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছ, তোমাদের ওপর সিয়াম বা রোজা ফরজ করা হলো যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পুর্ববর্তীদের, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ -সুরা বাকারা : ১৮৩ রোজা যুগে যুগে : ঐতিহাসিকভাবে রোজার প্রচলন বহুযুগ আগে। এটি একটি প্রাচীন অনুশাসন। ইহুদি খ্রিষ্টানসহ প্রায় সব ঐশী ধর্মের অনুসারীদের ওপরই রোজা পালনের আদেশ কার্যকর ছিল। আল্লামা আলোসির মতে, হজরত আদমের (আ:) যুগেও রোজার প্রচলন ছিল। বিখ্যাত তাফসিরকারক মাহমুদুল হাসান (রহ:) বলেছেন, ‘রোজার হুকুম হজরত আদম (আ:) থেকে আজ পর্যন্ত অব্যাহত আছে।’ আল্লামা ইবনে কাছির তার বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থে লিখেছেন, ‘হজরত নুহের (আ:) যুগ থেকে প্রত্যেক মাসে তিনটি রোজা রাখার হুকুম ছিল এবং তা শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত বহাল ছিল। হজরত দাউদ (আ:) তার শিশুপুত্রের অসুস্থতার সময় সাত দিন রোজা রেখেছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। হজরত মূসা (আ:) চল্লিশ দিন রোজা রাখতেন এবং মহররমের দশ তারিখেও তিনি  রোজা রাখতেন। হজরত ঈসা (আ:) ও চল্লিশ দিন রোজা রাখতেন এবং তার অনুসারীদের রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, মানুষের আত্মশুদ্ধির জন্য আদিকাল থেকেই বিভিন্ন ধর্মে রোজা পালনের প্রচলন ছিল। তবে তার ধরন ও পরিপালন পদ্ধতি ছিল আলাদা। প্রাচীন চীনা সম্প্রদায়ের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ একটানা রোজা রাখার নিয়ম প্রচলিত ছিল। পারসিক অগ্নিপুজক, খ্রিষ্টান পাদ্রী এবং হিন্দু যোগীরাও রোজা পালন করতেন। ইসলামে রোজার প্রবর্তন : ইসলাম  শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা:)-এর মাধ্যমে পুর্ণতা লাভ করে। রোজার বর্তমান বিধানও তখন থেকে শুরু হয়। ইসলামে রোজা ফরজ হওয়ার পুর্বে মহানবী (সা:) মহররমের দশ তারিখে রোজা রাখতেন। তখন তিনি ইহুদিদের রীতি অনুযায়ী রোজা পালন করতেন। নবী করিম (সা:) ইহুদিদের থেকে আলাদা হতে চাইলেন এবং এজন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়াও করলেন। মহানবীর (সা:) প্রার্থনা অনুযায়ী হিজরি দ্বিতীয় বর্ষে অর্থাৎ ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে রোজা ফরজ হওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়। পবিত্র কুরআনের সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বর্ণিত নির্দেশ ছিল এ রকম : ‘ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, তোমাদের ওপর সিয়াম বা রোজা ফরজ করা হলো যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ সুরা বাকারা : ১৮৩। আল্লামা হাফেজ ইবনুল ফাইয়িম (রহ:) বলেছেন, ‘রোজার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় ফরজ করা হয়নি। সাহাবারা তাওহিদ, নামাজের শিক্ষা পুর্ণাঙ্গভাবে গ্রহণ করার পরই রোজার বিধান তাদের ওপর প্রবর্তিত হয়। পবিত্র কুরআনে রোজার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে বলা হয়েছে : ১. রমজান মাস হলো সেই মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের হেদায়াত ও সত্য পথযাত্রীদের জন্য রয়েছে সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য নির্ধারণকারী। কাজেই  তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে সে এ মাসে রোজা রাখবে। -সুরা আল বাকারা : ১৮৫ । ২. তোমরা খাও এবং পান করো তখন পর্যন্ত যখন তোমাদের সামনে সুবহে সাদিকের আলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে কাল রেখা থেকে। অতঃপর সুবহে সাদিক থেকে রাত আসা পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করো। -সুরা আল-বাকারা : ১৮৭ । ৩. নবী করিম (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে ও সওয়াবের আশায় রমজানের  রোজা রাখে এবং এমনিভাবে রাতে ইবাদত করে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে  দেয়া হবে। -বুখারি। ৪. রাসূল করিম (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একদিন রোজা রাখবে আল্লাহ তাকে দোজখ থেকে সত্তর বছরের দুরে রাখবেন। -বুখারি। রোজার ফজিলত : রোজার ফজিলত অফুরন্ত। রোজা মানুষকে পুতপবিত্র করে এবং তার গুনাহ খাতাকে নির্মুল করে দেয়। আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন বলেন, ‘রোজা আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো’। দুনিয়ার পুণ্যের কাজের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার এবং প্রতিদানের কথা রয়েছে। কিন্তু রোজার যে নিয়ামত ও প্রতিদান তার কোনো সীমা পরিসীমা নেই। মহানবী (সা:) বলেছেন, সব কাজের পুণ্য দশগুণ হতে শত শত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি হতে পারে, কিন্তু রোজা একমাত্র আল্লাহর জন্য বিধায় তার পুণ্য আল্লাহ নিজেই দিবেন। রমজান মাসে রোজার মাধ্যমে মুসলমানরা ধৈর্য্য এবং সংযমের গুণাবলি অর্জন করে। আর যারা ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তারা আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে জান্নাত লাভ করতে সমর্থ হন। তাই মহানবী (সা:) বলেছেন, রমজান মাস ধৈর্য্যের মাস এবং ধৈর্যের বিনিময় হচ্ছে বেহেশত। রমজান মাস রোজাদারদের গুনাহ থেকে মুক্ত করে নিষ্পাপ করে দেয়। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা:) অপর এক হাদিসে বলেছেন, ‘মাতৃগর্ভ হতে শিশু যেরূপ নিষ্পাপ হয়ে ভূমিষ্ঠ হয় রমজানের একটি রোজা পালন করলে বান্দাহ ঠিক সেরূপ নিষ্পাপ হয়ে যায়। মহানবী (সা:) অপর এক হাদিসে বলেছেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ’। ঢাল যে রকম শত্র“র আক্রমণ হতে রক্ষা করে, তেমনি রোজা ঢাল স্বরূপ মানুষকে গুনাহ তথা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে রাখে। রোজার সামাজিক গুরুত্ব : ধর্মীয় কর্তব্যের বাইরে রোজা পালনে রয়েছে সামাজিক, নৈতিক এবং দৈহিক গুরুত্ব। রোজার সামাজিক আবেদন বা শিক্ষা নামাজের সামাজিক শিক্ষার চেয়েও  বেশি কার্যকর। মহানবী (সা:) বলেছেন, কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধের একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে রোজা। একজন রোজাদার ব্যক্তি রোজা রাখার মাধ্যমে তার সব কুপ্রবৃত্তিকে শাসন করে। ঝগড়া, ফাসাদ, খুন-খারাবি, অশ্লীল কথাবার্তা সব কিছু থেকে বিরত থাকে। এতে রোজাদার উন্নত নৈতিক চরিত্রে বলীয়ান হয়ে উঠতে পারে। রোজা মানুষের কুপবৃত্তিগুলোকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেয়। রোজার মাধ্যমে রোজার ক্ষুধা, উপবাস ও পানাহারের কষ্ট অনুভব করে। এতে সে গরিব, দুঃখী ও অভাবী মানুষের দুঃখ কষ্ট অনুধাবন করতে পারে। ফলে তার মধ্যে সৃষ্টি হয় সাম্য, মৈত্রী ও সহানভুতির অনুপম গুণাবলি। এতে গরিব দুঃখী নির্বিশেষে সামাজিক বন্ধন সদৃঢ় হয়। সমাজ হয়ে ওঠে সুন্দর। রোজাদারের মধ্যে সহানুভুতির মনোভাব তৈরি হওয়ায় তারা অভাবী ও গরিব মানুষকে বেশি বেশি করে দান-খয়রাত করে থাকে। ফলে তারা সমাজের অভাবী মানুষের দুঃখ লাভ করার সুযোগ পায়। রমজানের রোজার মাসে ফিতরা, জাকাত ইত্যাদি প্রদান করে ধনীরা। এতে সমাজে দারিদ্র্য দুরীকরণে এক বিরাট সুযোগের সৃষ্টি হয়। আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণায় দেখা গেছে, রোজা মানুষের দৈহিক দিক থেকেও উপকৃত করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, ‘রোজা মানুষকে কোষ্ঠকাঠিন্য, উচ্চ ও নিম্নরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি রোগ- শোক থেকে বাঁচায়। অতএব, দেখা যায় রমজানের রোজা মুসলমানদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণের মাস। আত্মার উন্নতি, ইহলৌকিক কল্যাণ এবং পারলৌকিক মুক্তির জন্য রোজা মুসলিম জীবনে আসে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের বার্তা নিয়ে।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো খবর
© All rights reserved ©2021  Daily Andoloner Bazar
Site Customized By NewsTech.Com