ঢাকা অফিস \ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতেই সরকার লকডাউন দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এমন অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আজকে পরিবহন শ্রমিকরা আন্দোলনে গেছেন, যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু তাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এই সরকার লকডাউন দিয়েছে কোনো ব্যবস্থা না করে এই খেটে খাওয়া মানুষের জন্য, দিন আনে দিন খায় মানুষের জন্য কিংবা শ্রমিকদের জন্য কোনো ব্যবস্থা না করে তারা এখানে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করছে লকডাউনের নামে ক্র্যাকডাউন করে। তারা (সরকার) আজকে বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠন, ছাত্র সংগঠনের ওপর আক্রমণ করে তাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে, যারা তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদেরকে গ্রেপ্তার করছে। আজকে সমস্ত জাঁতি জিম্মি হয়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে শ্রমিক শ্রেণি ও তরুণ সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান মির্জা ফখরুল। এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে তরুণ-যুবক এবং শ্রমিক শ্রেণি। তাদের একতাবদ্ধ হতে হবে। বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, গতকাল (গত সোমবার) মাওয়া ঘাট থেকে স্পিডবোটের যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, ২৭ জন নিহত হয়েছেন। সরকারের যে কোনো ব্যবস্থাপনা নেই এই দুর্ঘটনা তার একটা কারণ। স্পিডবোট চালু করেছে ঠিক আছে কিন্তু লোকসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। আজকে সরকার লকডাউন দিয়েছে, কোথাও কোনো লকডাউন নেই। গণপরিবহন চালু করল যে আপনার আন্তঃজেলা পরিবহন হবে না, শুধুমাত্র জেলার মধ্যে থাকতে হবে। এগুলো থেকে বোঝা যায়, কতটা দায়িত্বহীন, কতটা অযোগ্য এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা (সরকার) শুধুমাত্র নিজেদের দুর্নীতির জন্যৃ। আজকে পাহাড় গড়ে তুলেছে আওয়ামী লীগের লোকেরা, পাহাড় গড়ে তুলেছে আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট আমলারা। শ্রমিকদের জন্য সরকারের প্রণোদনা নেই, অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, করোনার মধ্যে আজকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন আমাদের শ্রমিক ভাই-বোনেরা। করোনার যে প্রণোদনা সরকার ঘোষণা করেছে সেই প্রণোদনার মধ্যে কিন্তু শ্রমিকদের জন্য কোনো বরাদ্দ সেভাবে রাখা হয়নি, সুনির্দিষ্টভাবে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। যা কিছু প্রণোদনা দেয়া হয়েছে মালিক শ্রেণিকে দেয়া হয়েছে এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আওয়ামী লীগের যারা দোসর তারা নিজেরা নিয়ে চলে যাচ্ছে। আমরা বার বার বলেছি, তুলে ধরেছি যে, করোনাকালে যাদের বেশি প্রয়োজন যারা দিন আনে দিন খায়, যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে কাজ করে, যারা ছোট-ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করে তাদেরকে সবেচেয়ে আগে সহযোগিতা করতে হবে। আমরা বলেছিলাম কমপক্ষে তিন মাসের এককালীন ১৫ হাজার টাকা অনুদান দিতে হবে। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানান ফখরুল। দলীয় প্রধানের অসুস্থতায় নেতাকর্মীদের উদ্বেগের খবর জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে আমরা সবাই নিশ্চয়ই উদ্বিগ্ন। এখনও উদ্বেগের মধ্যে আছেন দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা কেমন তা নিয়ে। আপনারা সবাই শুনেছেন যে, গতকাল (গত সোমবার) তার একটু শ্বাসকষ্ট হওয়ায় সিসিইউতে নেয়া হয়েছে। এখনও তিনি সিসিইউতে আছেন। অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। এখন তিনি স্থিতিশীল আছেন। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর কাছে তার জন্য দোয়া চাইছি, সমস্ত দল নয়, সমগ্র জাঁতি আজকে প্রার্থনা করছেন। দোয়া করছেন, এই দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের শেষ আশ্রয়স্থল, যাকে গণতন্ত্রের একমাত্র প্রহরী বলা যায়, তিনি (খালেদা জিয়া) যেন অতি দ্রুত সুস্থতা লাভ করেন। জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের ৪২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-শ্রম সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, ফিরোজ উজ জামান, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম, কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন সরকার, জাহাঙ্গীর আলম, কোহিনুর মাহমুদ, কাজী আমীর খসরু, খন্দকার জুলফিকার মতিন, সুমন ভুঁইয়া, মাহবুবুল আলম বাদল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply