ঢাকা অফিস ॥ সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও লকডাউনের কঠোর বিধি-নিষেধ এবং বৃষ্টির কারণে গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ‘কঠোর লকডাউনের’ দ্বিতীয় দিনে বৃষ্টি এবং ছুটির কারণে রাস্তায় যানবাহন এবং মানুষজনের চলাচল ছিল কম। রাজধানীর মোহাম্মদপুর ধানমন্ডি, ফার্মগেট কারওয়ান বাজার, শাহবাগ এবং এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে সামান্য কিছু খাবার ও অন্যান্য জরুরি সেবার দোকানপাট খোলা থাকলেও সেগুলো ক্রেতাশূন্য লক্ষ্য করা গেছে। এদিন রাস্তায় গত কয়েকদিনের তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়ি এবং রিকশাও কম চলাচল করতে দেখা গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যারা বিভিন্ন প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে রাস্তায় বের হন, তারাও পথে পথে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েন। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা গেছে তারা যানবাহন থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বাইরে বের হওয়ার উপযুক্ত কারণ দেখাতে না পারলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আবার অপ্রয়োজনে বর হলে গুনতে হয় জরিমানা। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে এক সপ্তাহের ‘কঠোর লকডাউন’। এ সময়ে বন্ধ রাখা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি অফিস। সড়কে অপ্রয়োজনীয় চলাচল ও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে রাজধানীর বাজারের চিত্রটা উল্টো। শুক্রবারের দিন মানেই বাজারে ভিড় জমে। এর ব্যতিক্রম হয়নি দেশব্যাপী চলমান ‘কঠোর লকডাউনে’র প্রথম শুক্রবারেও। বৃষ্টির কারণে সকালের দিকে কিছুটা ভিড় কম থাকলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বেড়েছে রাজধানীর বাজারগুলোতে। সকালে রাজধানীর ধূপখোলা কাঁচাবাজার, সূত্রাপুর বাজার, দয়াগঞ্জ বাজার ও সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে দেখা যায়, স্বাভাবিক দিনের মতোই ক্রেতাদের চলাচল ছিল। ‘কঠোর লকডাউনে’র বিধিনিষেধে বলা হয়েছে, কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। যার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন, বাজার কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনকে। তবে রাজধানীর সূত্রাপুর কাঁচাবাজার, দয়াগঞ্জ বাজার ও সেগুনবাগিচা বাজার আগের নির্ধারিত স্থানেই খোলা রয়েছে। বিক্রেতারা সেখানে পাশাপাশি বসেই পণ্য বিক্রি করছেন। সূত্রাপুর বাজারের মাছের বাজারটি বাজারের বাইরের রাস্তায় নিয়ে আসা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সকালে ক্রেতা সমাগম কিছুটা কম ছিল। যারা এসেছেন তাদের বেশিরভাগই স্বাস্থ্যবিধি মানলেও বিক্রেতাদের মধ্যে ছিল অনীহা। সূত্রাপুর কাঁচাবাজারে সবজি বিক্রেতা জাকির বলেন, ভাই, এই গরমের মধ্যে মাস্ক পরে থাকাটা কঠিন। সে সঙ্গে বারবার কাস্টমারের সঙ্গে কথা বলতে হয়। মাস্ক পরা থাকলে তারা দাম ঠিক মতো শুনতে পারেন না। একই বাজারের মাছ বিক্রেতা সালাম মিয়া বলেন, রাস্তায় বসে মাছ বিক্রি করছি। বৃষ্টি হচ্ছে, এটা একটা বড় সমস্যা। তারপরও সরকার নিয়ম করছে, তা মানতেছি। একই চিত্র ছিল ধূপখোলা বাজারেও। বাজারটি স্থানান্তর করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী ধূপখোলা মাঠে। সেখানেও বিক্রেতাদের মুখে মাস্কের দেখা মেলেনি। তবে ক্রেতাদের বেশিরভাগই মাস্ক পরে ছিলেন।
এদিকে রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে ছিল সর্তকতা। সকাল থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাজধানীর বিভিন্ন চেক পয়েন্টে তল্লাশি চালান পুলিশ সদস্যরা। বাইরে থেকে রাজধানীতে ঢোকা গাড়ির সংখ্যা ছিল অনেক কম। যারা ঢুকছেন তারা অনেকেই জরুরি প্রয়োজনের বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেছেন। আর যারা অযৌক্তিক কারণে আসা-যাওয়া করছেন, তাদের মামলা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার গাবতলী পুলিশ চেকপোস্ট সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যেসব গাড়ি আমিনবাজার হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। অনেকেই বের হয়েছেন বিদেশে যাওয়ার জন্য করোনা টেস্ট করতে, কেউ রোগী দেখার জন্য হাসপাতালে যাচ্ছেন, আবার জরুরি পরিসেবার যানবাহন তো রয়েছেই। এ বিষয়ে গাবতলী জোনের ট্রাফিক সার্জেন্ট সামসুদ্দিন সরকারবলেন, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করা এবং যথাযথ কারণ উপস্থাপন করতে না পারার কারণে অনেককে আমরা মামলা দিচ্ছি। করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে বাসায় থাকা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বাইরে বের হলে নিজে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এমনকি পরিবারের সদস্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply