নিজ সংবাদ ॥ কুষ্টিয়ার পৌর এলাকার লাহিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ থেকে এখনো ঠিকাদারির রেখে যাওয়া ইট বালুসহ নির্মান সামগ্রী এখনো সরানো হয়নি। আগের অবস্থায় পড়ে রয়েছে মাঠে। এদিকে হামলার ঘটনার পর কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো মূল অভিযুক্ত কাউন্সিলর ও দলিল লেখক সমিতির সাধারন সম্পাদক সোহেল রানা আশাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের দাবিতে গতকাল শনিবার সকালে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য নির্বাচিত কাউন্সিলর সোহেল রানা আশা ঠিকাদারি কাজে জড়িত। তার ঠিকাদারি কাজে ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী লাহিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় আঙ্গিনায় নিয়ে এসে রেখে তিনি কাজ করছেন। স্কুলের মাঠেই ইট থেকে খোয়া প্রস্তুত করাসহ নানা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন আশা।
স্থাণীয়রা জানান, সোহেল রানা আশা এর আগে গত পৌর নির্বাচনে ২১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হন। সর্বশেষ একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মারা গেলে তিনি উপ-নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে জয়লাভ করেন। এছাড়া তিনি সদর উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের কথিত দলিল লেখক সমিতির সাধারন সম্পাদক। এই সুত্রে তিনি পর পর দুই বার দলিল লেখক সমিতির এ পদে থেকে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে নিয়েছেন। টাকার জোরে তিনি পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে মাস্তানদের হাতে রাখেন। এলাকার মানুষের কাছে তিনি আতঙ্ক।
কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর তার দাপট আরো বেড়েছে। তিনি কাউকে পরোয়া করেন না। এমনকি আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা পৌর মেয়র আনোয়ার আলীকেও তিনি কেয়ার করেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানান, স্কুল মাঠে ৩১ মার্চ সকালের দিকে লাহিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে নির্মান সামগ্রী সরানোর কথা বললে আশাসহ তার লোকজন বেপরোয়া আচরন শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা স্কুলের প্রধান শিক্ষককে সবার সামনে কলার ধরে কিল-ঘুষি মারেন। এতে তিনি আহত হন। এতে স্কুলের অন্যদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের এক নারী শিক্ষক জানান, আশা এলাকার কাউন্সিলর, তার ব্যাপক দাপট রয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার কাছের লোক হওয়ায় তিনি কাউকে পরোয়া করেন না। টাকা দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করে রেখেছেন। পুলিশ ইচ্ছা করেই তাকে ধরছে না। তাকে সুযোগ দিচ্ছে।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন,‘ ঘটনার পর মামলা হলেও আশা এখনো গ্রেফতার হয়নি। এছাড়া স্কুলের মাঠ ও আঙ্গিনায় এখনো নির্মাণ সামগ্রী পড়ে রয়েছে। সেগুলো সরানো হয়নি। স্কুল মাঠে বালি থাকায় ছেলে-মেয়েরা খেলতে পারে না। বাতাস হলে বালু উড়ে ক্ষতি হচ্ছে সবার। মামলার করেও ভয়ে আছি। কখন আবার হামলা হয়ে এমন শঙ্কায় দিন পার করছি। স্কুলের ছেলে-মেয়েরাও ভয়ে আছে।’
এদিকে আশাসহ তার সহযোগীদের গ্রেফতারের দাবি গতকাল শনিবার সকালে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। তারা দ্রুত গ্রেফতারের দাবি ও স্কুল মাঠ থেকে নির্মাণ সামগ্রী সরনোর দাবি জানিয়েছে। ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছে কাউন্সিলর সোহেল রানা আশা। তার ফোনও বন্ধ রয়েছে। কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি সাব্বিরুল ইসলাম বলেন,‘ একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আশাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’