নরসিংদী জেলার রায়পুরা পৌর এলাকায় নিজের বাড়ি হলেও প্রায় এক বছর যাবৎ কালীগঞ্জের আনাচে-কানাচে বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটে ভ্যানে আনারস, কাঁচা-পাকা আম, লেবু ফেরি করে বেড়ান। তবে এই গরম থেকে রেহাই পেতে মাথার ওপরে তার বিশাল ছাতা টানানো। এতে ক্রেকা-বিক্রেতা দুই’ই রক্ষা পাচ্ছেন রোদ্র থেকে।
কালীগঞ্জ পৌর এলাকার মুনশুরপুর গ্রামে বাদল মিয়ার বাড়িতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকেন মো. কবির হোসেন। বাজারে যখন যেই ফল বা সবজির ঘাটতি থাকে তা তিনি সংগ্রহ করে কালীগঞ্জের এলাকায় ভ্যানে নিয়ে বিক্রি করে বেড়ান। প্রায় ২০ বছর যাবৎ এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। নিজ এলাকায় ব্যবসার পরিস্থিতি ভালো নয় বলে কালীগঞ্জে গত এক বছর ধরে অবস্থান করছেন এবং আগের থেকে বেশ ভালোই আছেন বলে জানান ভ্রাম্যমাণ ওই ফল বিক্রেতা।
কবির হোসেন জানান, দরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ৬ষ্ঠ শ্রেণির বেশি আগাতে পারেননি। বাবাও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা করতেন। যে কারণে সংসারের অভাব অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। সংসারের বড় ছেলে হওয়ায় পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বাবার সঙ্গে কাজে যোগ দিতে হয়েছে। খুব কাছ থেকে শিখেছেন কিভাবে ব্যবসা করতে হয়। তারপর বিয়ে করলে তার সংসারে তিন ছেলে ও তিন মেয়ে আসে। এত বড় সংসারের খরচ রায়পুরায় থেকে তিনি বহন করতে পারছিলেন না। তাই কালীগঞ্জের মুনশুরপুর গ্রামের বাসা ভাড়া নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন মৌসুমি ফল বা সবজি এনে বিক্রি করেন।
তিনি আরো জানান, প্রতিদিন ভোরে গাজীপুরের চৌরাস্তার এলাকার আড়ত থেকে সিলেটি লেবু কিনে নিয়ে আসেন। এক বস্তা লেবু আনেন ৪ হাজার টাকা দিয়ে। সারা দিন এই লেবু বিক্রি করে ৫-৬শ’ টাকা লাভ হয়। কিন্তু মাঝে মাঝে খারাপ লেবুও বস্তায় পড়ে গেলে লোকশান গুনতে হয়।
লেবু বিক্রেতা মো. কবির হোসেন
অসহায় দৃষ্টি আর হাসিমাখা মুখে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে কবির আরো বলেন, আল্লাহ তবুও অনেক ভালো রাখছেন। যদি কখনো টাকা পয়সা হয় তাহলে একটা ফলের দোকান দিবো। দোকানটা দিতে পারলে কষ্ট কমে আসবে। এটাই আমার জীবনের শেষ ইচ্ছা।
শুধু কবিরই না তাকে দেখে ভ্রাম্যমাণ এই লেবু ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে কালীগঞ্জ বাজার বাস স্ট্যান্ডে ভ্যানে করে লেবু ব্যবসা করছেন কালীগঞ্জ পৌর এলাকার মুনশুরপুর গ্রামের মো. আপন।
আপন বলেন, আয়-রোজগার করার মতো কেউ নেই। বাবা বেশ কিছুদিন হয় মারা গেছেন। মাকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন চলছে। একদিন কবির কাকার সঙ্গে দেখা হলে তিনিই উৎসাহ দেন ভ্যানে করে লেবু ব্যবসা করার। কিছুদিন হয় শুরু করেছি। এখনও পর্যন্ত ভালোই আয় হয়েছে। সামনে এই সিজন গেলে অন্য কিছু করার কথাও জানায় কিশোর আপন।
কালীগঞ্জ ড্রাগ হাউজের মালিক ইমতিয়াজ আহমেদ রানা বলেন, এই ভ্রাম্যমাণ এই লেবু ব্যবসায়ীকে প্রায় এক বছর যাবৎ দেখছি। সে বিভিন্ন মৌসুমে বাহারি রকমের ফল ও সবজি বিক্রি করেন। খুবই ভালো ও পরিশ্রমী মানুষ তিনি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো বাজারে যখন যেটা পাওয়া যায় না, তিনি তখন সেটা বিক্রি করেন। তুলনামূলকভাবে অনেক কম দামেই বিক্রি করেন। এই মুহূর্তে বাজার জুড়ে লেবুর সংকট হওয়ায় তিনি লেবু বিক্রি করছেন। মাত্র আট থেকে দশ টাকা হালি দরে। এতে সাধারণ ক্রেতারাও উপকৃত হচ্ছেন। যদিও তিনি স্থানীয় নন কিন্তু এই কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে গেছেন।