ঢাকা অফিস ॥ দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনের চলমান ছুটি আরেক দফায় বাড়িয়ে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। শনিবার শিক্ষামন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ায় এবং দেশের কোন কোন অঞ্চলে আংশিকভাবে কঠোর লকডাউন কার্যকর থাকায়, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় এবং কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সাথে পরামর্শক্রমে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এবতেদায়ী ও কওমি মাদরাসাসমূহে চলমান ছুটি আগামী ৩০ জুন ২০২১ তারিখ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে ১৩ জুন দেশের সকল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কথা জানিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় ১৫ মাস ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সরকার কয়েক দফা পরিকল্পনা করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় দফায় দফায় ছুটি বাড়ছে। গত ২৬ মে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ১৩ জুন স্কুল-কলেজে সরাসরি শিক্ষা কার্যক্রম চালুর আশা প্রকাশ করেছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে এসে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ‘মহামারী পরিস্থিতি খুব বেশি প্রতিকূল না হলে’ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। ক্লাস শুরুর সম্ভাব্য তারিখ জানানোর পাশাপাশি দুই মাসের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে করোনাভাইরাসের ভারতে উদ্ভূত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের স্থানীয় সংক্রমণ ঘটার পর গত দুই সপ্তাহে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোসহ পরিস্থিতির বেশ অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটিও বাড়ল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেনের মহামারীকালের চলমান ছুটিও ৩০ জুন পর্যন্ত বেড়েছে। শনিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সব ধরনের সরকারি, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেনের ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। তবে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীরা যেন বাসায় অবস্থান করে, সেটি স্থানীয় প্রশাসনকে পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ শিক্ষাসচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু আমরা বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষাদান অব্যাহত রেখেছি। হতে পারে যে এই বিকল্প পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা অভ্যস্থ নয় বলে এখনও তারা নিজেদেরকে কমফোর্ট জোনে নিয়ে যেতে পারছে না। শনিবার ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। শিক্ষাসচিব বলেন, এই মুহূর্তে এর চেয়ে বিকল্প তো আমাদের আর কিছু নেই। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থা কিংবা আইসিটি নির্ভর যে অবকাঠামো আছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করার চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন, যেদিন থেকে আমরা স্কুল কলেজ বন্ধ রেখেছি সেদিন থেকে আমাদের একটি নির্দেশনা ছিল যেদিন আমরা যতদ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিব তখন একটি রি-ওপেনিং প্লান করতে হবে। আমরা যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবো তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগের মতো করে চালাতে পারবো না। রি-ওপেনং প্লানটা কি হবে সেটা আমাদের বোর্ডে উপস্থাপন করা হয়েছিল। আমাদের কাছে এই রি-ওপেনিং প্লানটা অনেক আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। আমরা এই প্লানটাকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দিয়েছি এবং এটি অনুসরণ করে যেন আরো বড় আকারের একটি রি-ওপেনিং প্লান করে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মাউশি থেকে এটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেন অনুসরণীয় হয়। যখনই আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবো তখন ঐ রি-ওপেনিং প্লানকে অনুসরণ করতে হবে। ওই প্লান অনুযায়ী নির্দেশনা দেওয়া আছে, প্রতিটি ক্লাসরুম কেমন হবে, শিক্ষার্থীরা কিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসবে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কেমন আচরণ হবে, অভিভাবকদের আচরণ কেমন হবে তার পরিষ্কার নির্দেশনা দেয়া আছে। কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্র্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ ও কলেজের শিক্ষক, অভিভাবক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply