ঢাকা অফিস ॥ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেবল গাছ নিধনই নয়, কাটা গাছের ১০ গুণ বৃক্ষ রোপন করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলমান ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্প বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। সমালোচনার মুখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা বন্ধ রাখা হয়েছে জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, সেখানে এখন অন্য কাজ চলছে। এ পর্যন্ত ৫০টি গাছ কাটা হয়েছে। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আরও ৫০টি গাছ কাটা হতে পারে। তবে নির্দেশনা দিয়েছি সরেজমিনে দেখে যত কম গাছ কাটা যায় সেই ব্যবস্থা করতে। কারো অবহেলাজনিত কারণে উদ্যানের গাছ কাটা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মোজাম্মেল হক বলেন, এত বড় এলকায় এত মানুষের সমাগম হয়, তাতে কোনো টয়লেট ফ্যাসিলিটিজ এবং রিফ্রেশমেন্টের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। পরিবারসহ দর্শনার্থীরা উদ্যানে যাতে ভ্রমণ করতে পারে এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার পাশাপাশি নিরাপদ ও মানসম্পন্ন পরিবেশে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটাতে পারে তার সব ব্যবস্থা এখানে করা হচ্ছে। প্রতিদিন নিজস্ব পরিবহনে ঢাকা ও তার আশেপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই হাজার শিশুকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এনে তাদের ইতিহাস জানোনোর ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে আন্তর্জাতিক মানের করে তৈরি করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দৃষ্টিনন্দন করার জন্য পরিকল্পনা করেছি। জাতিকে আগে অবহিত করতে পারিনি বলে এই ভুল বোঝাবুঝির জায়গা তৈরি হয়েছে। এজন্য আমরা দুঃখিত। সম্পূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আমি মনে করি সর্বস্তরের মানুষ খুশি হবেন। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রতিদিন ৫০ হাজার মানুষ আসতে পারবে। সাতটি ফুড কিয়স্কে দাঁড়িয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। গাছগুলো রেখেই কেন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্নে মোজাম্মেল বলেন, আর্কিটেকদের বলেছি। সরেজমিনে গিয়ে আমি দেখিনি, আজকে (গতকাল মঙ্গলবার) গিয়ে দেখব, কতটুকু মিনিমাইজ করা যায়। পৃথিবীর কোথাও গাছ কাটায় নিষেধ করা থাকে না, কিছু নিয়মনীতি থাকে। কোর্টের থেকে বড় হলো পার্লামেন্ট, সেখানে এ বিষয়ে আইন পাস হয়েছে, সেই আইন অনুযায়ী আমরা কাজটি করছি। আমরা আদালতের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। মন্ত্রী বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা নিয়ে পরিবেশবিদ ও নগরবিদসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে সরকার। তাদের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনে প্রকল্প এলাকার নকশা পরিবর্তন হতে পারে। তিনি বলেন, আমরা পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রেখেই কাজ করছি। উদ্যানের যে গাছগুলো না কাটলেই নয়, কেবল সেগুলোই কাটা হয়েছে এবং এর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অন্তত ১০ গুণ বেশি গাছ লাগানো হচ্ছে। এরপরও মানুষের উদ্বেগকে বিবেচনায় নিয়ে ঈদের পর আমরা পরিবেশবিদসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার ও নগর পরিকল্পনাবিদদের সাথে আলোচনা করব এবং পরিবেশের ক্ষতি না করে কীভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কাজ চলমান রাখা যায় তার উপায় বের করার চেষ্টা করব। তবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণের স্বার্থে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তি সংগ্রামের সাথে সম্পর্কিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সকল ঐতিহাসিক স্থান যথাযোগ্য মর্যাদায় সংরক্ষণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য গাছ কাটা হলে তা দুঃখজনক। যদি এমন হয়, নিশ্চয়ই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। দায়িত্ব পালনে অসাবধান হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। কোন প্রেক্ষাপটে গাছ কাটা হয়েছে তা যাচাই করে দেখা হবে। সেখানে ব্যত্যয় ঘটেছে কি-না দেখব। যারা প্ল্যান করেছেন, তাদের নিয়ে সরেজমিনে দেখে, যদি গাছ কাটায় সতর্ক না থাকে তবে ব্যবস্থা নেব। নকশায় কতটুকু কী পরিবর্তন করতে হতে পারে, তা আলোচনা করে দেখব। আরও উন্নতি করা যায় কিভাবে, সেজন্য যা যা করণীয় তাই করব। গাছ কাটা আমাদের উদ্দেশ্য না। যত কম কাটা যায় বা কোনো গ্যাপ না রেখে কাজ কীভাবে করা যায়, আলোচনা করে তা ঠিক করা হবে। কি করব তা জাতির সামনে তুলে ধরা হবে, সবাইকে জানিয়েই করব। মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনে বিভিন্ন সময়ের আন্দোলন ও ঘটনাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইতোমধ্যে শিখা চিরন্তন, স্বাধীনতা স্তম্ভ ও ভূগর্ভস্থ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রভৃতি নির্মাণ করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ, আধুনিক নগর উপযোগী সবুজের আবহে আন্তর্জাতিকমানে গড়ে তোলা ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বর্তমানে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ কাজ যেমন, পাকিস্তানি শাসনবিরোধী ২৩ বছরের মুক্তিসংগ্রাম ও ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত ভাস্কর্য স্থাপন, ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে ভাস্কর্য স্থাপন, ইন্দিরা মঞ্চ নির্মাণ, ওয়াটার বডি ও ফাউন্টেইন নির্মাণ, ভূগর্ভস্থ ৫০০ গাড়ীর কার পার্কিং, ৭ টি ফুড কিয়স্ক (মহিলা, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের পৃথক টয়লেট ফ্যাসিলিটিসহ) ও শিশুপার্ক নির্মাণসহ বিভিন্ন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, এত বড় এলাকায় এত মানুষের সমাগম হয় তাতে কোনো টয়লেট ফ্যাসিলিটিজ এবং রিফ্রেশমেন্টের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। পরিবারসহ দর্শনার্থীরা উদ্যানে যাতে ভ্রমণ করতে পারে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার পাশাপাশি নিরাপদ ও মানসম্পন্ন পরিবেশে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটাতে পারে, তার সব ব্যবস্থা এখানে করা হচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খাবারের দোকান-ভাতের হোটেল ইত্যাদি বানানোর জন্য গাছ কাটা হচ্ছে মর্মে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা সত্যিই দুঃখজনক। প্রকৃতপক্ষে, মুক্তিসংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত স্থানসমূহ সংরক্ষণে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। সেই আলোকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্থানসমূহ সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গৃহীত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছোট-বড় কিছু সংখ্যক গাছ কাটা হলেও প্রথম পর্যায়ে প্রায় এক হাজার গাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যা ইতোমধ্যেই আমরা আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে অবহিত করেছি। এ লক্ষ্যে দেশের প্রখ্যাত উদ্ভিদবিদ-উদ্যানতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হচ্ছে।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply