ঢাকা অফিস ॥ শুধু ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষ নেয়ার কারণেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। সেনাশাসক জিয়াউর রহমান ও হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে সংবিধানে যুক্ত হওয়া ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ ও ‘বিসমিল্লাহ’ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এসেও কেন বাদ দেয়া গেল না, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন এই বর্ষিয়ান রাজনীতিক। রাশেদ খান মেনন বলেন, আমাদের সুযোগ এসেছিল আবার। ২০০৮ সালের পর আমরা আবার নতুন করে সংবিধান সংশোধন করার সুযোগ পেয়েছিলাম। এবারও আমরা এগোলাম ঠিকই, কিন্তু আটকে গেলাম। কারণ, আজকে যিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনি রাজি হলেন না এই কথা বলে যে, বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম তুলে দিলে পরে অন্যরা এসে মুসলিম ভোটকে তারা নিয়ে চলে যাবে। সুতরাং কিছু অদলবদল করে বা সংজ্ঞায়িত করে “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” ও ‘“বিসমিল্লাহ”কে রেখে দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির ৫০ বছর ও উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির পুনরুত্থান’ শীর্ষক ওয়েবিনারে মেনন এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, যখন শেষ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু এটা (রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা রাখা) সামাল দেয়ার চেষ্টা করলেন, তখন সেনা বাহিনীর একটা অংশ বঙ্গবন্ধুকে সবংশে নিহত করেছিল। এই হত্যাযজ্ঞের অন্যতম নায়ক কর্নেল ফারুকের বক্তৃতা ও দলিলে তা পাওয়া যায়, ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সম্প্রতি সেটা উন্মুক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল একমাত্র ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষ নেয়ার কারণে। পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিনাশ করে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে পুনর্বিন্যাস করেন বলেও মন্তব্য করেন বামপন্থি এ রাজনীতিক। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের আমলে সংবিধানের মূলনীতি থেকে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা পরিপূর্ণভাবে বাদ দিয়ে দেয়া হয়। (তখন) আমরা দেখি যে, আমাদের নেতারা বক্তৃতা শুরু করেন বিসমিল্লাহ বলে। এই জায়গায় সংবিধানের সংশোধনীতে প্রস্তাবনার ওপরে বিসমিল্লাহ লিখতে হলো। মূলনীতির মধ্যে ‘আল্লাহর উপর বিশ্বাস’ এটাও যুক্ত হয়ে গেল। আমাদের সমস্ত সংবিধানটি ধর্মীয়করণ করা হলো। সাম্প্রদায়িকতা যোগ করা হয়ে গেল। মেনন আরও বলেন, এটা আরও বৃহত্তর রূপ নিল এরশাদের আমলে। তিনি সংশোধনীতে ‘রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম’ যুক্ত করে দিলেন। কেবল ইসলামি প্রজাতন্ত্র কথাটি বাদ দিয়ে বাদবাকি সমস্ত বিষয় হাজির করা হলো।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply