নিজ সংবাদ ॥ চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গার বাসা থেকে সকাল ৮টায় প্রাইভেট পড়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী জুয়েল রানা ওরফে তমাল। সাড়ে ৯টায় কুষ্টিয়া শহরের কাটাইখানা মোড়ে সমবায় ভবনের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আহত হয় সে, সাড়ে ১১টায় তার মৃত্যু হয় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। এত অল্প সময়ের মধ্যে আলমডাঙ্গা থেকে কুষ্টিয়া এসে মৃত্যু হওয়ায় ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। ছাদ থেকে ঝাপ দেওয়ার কথা বলা হলেও তার দেহে কোন আঘাতের চিহৃ নেই। হত্যারহস্য উৎঘাটনে কাজ করছে পুলিশ ছাড়াও পিবিআই ও সিআইডির একটি দল।
জুয়েল রানা তমাল চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা শহরের থানাপাড়া এলাকার মাসুদ রানার ছেলে। তমাল আলমডাঙ্গা সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষা ছিল। তার বাবা মাসুদ রানা পেশায় ব্যবসায়ী ও আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। দুপুরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে এসে একমাত্র ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি ভেঙ্গে পড়েন। সেখানে তার স্বজনরাও ভীড় জমায়।
তমালের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ বলছে, চারতলার ছাদ থেকে ঝাপ দিয়ে আতœহত্যা করেছে। এদিকে পুলিশের এই কথা মানতে নারাজ নিহত ছাত্রের বাবার। তাঁর দাবী ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করবেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল সূত্র বলছে, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কাটাইখানা মোড় এলাকায় একটি চারতলা ভবন থেকে জুয়েল নিচে ঝাপ দেয়। এতে গুরুতর আহত হলে কয়েকজন তরুণ তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছিল। চিকিৎসার কয়েক ঘন্টা পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। লাশ একই হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়।
জেনারেল হাসপাতালের মর্গে গিয়ে দেখা যায়, লাশের শরীরে কোথাও কোন গুরুতর জখমের চিহৃ নেই। আঘাত বা রক্তাক্তও নেই। তবে নাক ও মুখের ভেতর রক্ত দেখা গেছে। বাম হাতের কনুইয়ের নিচে কালো দাগ দেখা গেছে। বেলা ২টার দিকে হাসপাতালের মর্গের সামনে কথা হয় তমালের বাবা মাসুদের সঙ্গে। দুই ভাইবোনের মধ্যে তমাল বড়। মেধাবী ছাত্র ছিল। সকাল ৮টার দিকে প্রাইভেট পড়তে যাবার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর দুপুরে পুলিশ তাকে ফোন করে জানায়, হাসপাতালে তমাল মারা গেছে। তার লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। তমাল কখনো কুষ্টিয়াতে আসেনি। তার কাছে তেমন টাকাও থাকে না। তমালের এক ফুফুর বাসা কুষ্টিয়া শহরে। তবে এ বাসায় সে এর আগে কখনো একা আসেনি। বাড়ির লোকজনের সাথে এসেছে। তার কোন বন্ধুরা তাকে ডেকে আনতে পরে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তমালের এক চাচা বলেন, সে নিরীহ প্রকৃতির। বাড়ির বাইরে একা যায় না তেমন। স্কুল আর প্রাইভেট নিয়ে থাকে। বাড়ির কোন সদস্যের সাথে তার কোন ঝামেলা হয়নি যে, রাগ করে সে চলে আসবে। এখানে কোন ষড়যন্ত্র আছে। তার বাবা রাজনীতি করে। তার শত্র“ থাকতে পারে। তারাও এমন কাজ করতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি।
মাসুদ কান্না জড়িত কন্ঠে প্রায় একই কথা বলেন, ‘আমি জোর দিয়ে বলছি, আমার ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে। আলমডাঙ্গায় আমার কিছু করতে পারবে না জেনে হয়তো শত্র“তা ছেলেকে কৌশলে কুষ্টিয়ায় নিয়ে এসে মেরেছে। আমি থানায় হত্যা মামলা করবো।’
ডিআইসি পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, যে ভবন থেকে ঝাঁপ দেওয়ার কথা বলছে সেখানে গিয়ে এমন কোন আলামত মেলেনি। আর ঝাপ দিলে তারও আলামত থাকবে। সেটাও পাওয়া যায়নি। ময়না তদন্ত হলেই বোঝা যাবে তাকে আদৌও হত্যা করা হয়েছে না কি অন্যকিছু।
মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন কুষ্টিয়া গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দীন বলেন, প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে তমাল চারতলা থেকে ঝাপ দিয়েছে। তবে আরও কয়েকটি বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে গেছে তাদের খোঁজা হচ্ছে। কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি।
Leave a Reply