কৃষি প্রতিবেদক \ এক বিশেষ ধরনের ফসল জমিতে চাষ করে নির্দিষ্ট বয়সে সবুজ ও নরম অবস্থায় মাটিতে মিশিয়ে যে সার তৈরি করা হয় তাকে সবুজ সার বলে। আর যে উদ্ভিদ এ ধরনের সার সরবরাহ করে তাকে বলা হয় সবুজ সার ফসল। এ জাতীয় উদ্ভিদের মধ্যে ধৈঞ্চা, শনপাট, মাষকলাই, কাউপি, বরবটি, খেসারি, মসুর, শিম ও মুগ অন্যতম। বর্তমানে দেশি ধৈঞ্চার পাশাপাশি আফ্রিকান ধৈঞ্চার চাষ হয়- যার শিকড়ে রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া নডিউল বা গুটি তৈরি করে। এ ধরনের গুটি কান্ডেও দেখা যায়। এ প্রজাতির ধৈঞ্চা বীজ ও কান্ডের সাহায্যে বংশ বিস্তার করে। আর তা ভেজা ও শুকনো উভয় মাটিতে বছরের যে কোনো সময় সম্ভব। সবুজ সার এক প্রকার জৈবসার। লিগিউম কিংবা লিগিউম নয় উভয় প্রকার উদ্ভিদ দ্বারা সবুজ সার তৈরি করা যায়। সবুজ সার ফসলের বৈশিষ্ট্য : দ্রুত বর্ধনশীল। অপেক্ষাকৃত অনুর্বর মাটিতেও ভালো জন্মে। স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। সাময়িক খরা কিংবা জলাবদ্ধতা সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে। রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়। সহজেই মাটিতে মেশানো যায়। মূল মাটির গভীরে প্রবেশ করে। শিমজাতীয় সবুজ সার রাইজোবিয়াম ব্যাক্টেরিয়ার মাধ্যমে শিকড়ে নডিউল তৈরি করে। উপকারিতা: সবুজ সার জৈব পদার্থ যোগ করে মাটিকে উর্বর করে এবং মাটির ভৌত গুণাবলির উন্নতি সাধন করে। অধিকাংশ সবুজ সার ফসল লিগিউমজাতীয়। তাই সহজেই রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া সহায়তায় বায়ুমন্ডলের নাইট্রোজেনকে শিকড়ের নডিউলে জমা করতে পারে। গাছ জীবিত অবস্থায় তা নিজেই গ্রহণ করে। তবে মারা যাওয়ার পর জমাকৃত নাইট্রোজেন জমিতে মিশে যায়, ফলে পরবর্তী আবাদি ফসলে নাইট্রোজেন সার অনেক কম লাগে। সবুজ সার ফসল গভীরমূলী হলে মাটির গভীর স্তর থেকে খাদ্যোপাদান পরিশোষণ করার পর মাটির উপরিভাগে এনে দেয়। জৈব পদার্থ যোগের মাধ্যমে সবুজ সার মাটির অভ্যন্তরের উপকারী অনুজীবের বংশবিস্তারসহ এদের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। জমির খাদ্যোপাদানসমূহকে সংরক্ষণ করে। সবুজ সার জৈব পদার্থ বিয়োজনের সময় উৎপাদিত জৈব এসিড ফসফরাসের প্রাপ্যতা বাড়ায়। জমির আর্দ্রতা ও ‘জো’ বজায় রাখতে সাহায্যে করে। বেলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা বাড়ায় এবং মাটিতে বাতাস চলাচলে সাহায্যে করে। ভূমিক্ষয় রোধ করে। ফসল বিন্যাসের ক্ষেত্রে সবুজ সার ফসল সহজেই খাপ খাইয়ে নেয়। আগাছা দমনেও সহায়তা করে। মাটিতে মেশানোর পদ্ধতি: সবুজ সার ফসল যে জমিতে জন্মানো হয়, সাধারণত সে জমির মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়। তবে এক জমিতে জন্মিয়ে অন্য জমিতে স্থানান্তর করেও মেশানো যায়। গাছের রং সবুজ থাকতেই অর্থাৎ কচি অবস্থায় কেটে টুকরো টুকরো করে প্রথমে মই দিয়ে পরে চাষ দিতে হবে। মেশানোর সময় জমিতে ছিপছিপে পানি থাকা উত্তম। কারণ এতে পচনক্রিয়া দ্রুত হয়। তবে লিগিউম জাতীয় উদ্ভিদ যেমন- রেইন্ট্রি, ইপিল-ইপিল, গ্লিরিসিডিয়া প্রভৃতির পাতা জমিতে বিছিয়ে দিয়ে চাষ দিলেই হবে। জৈব সার হচ্ছে মাটির প্রাণ, যার উৎস হিসেবে সবুজ সার ফসলের ভূমিকা অনন্য। আমাদের মাটিতে জৈব পদার্থের অংশ খুবই কম। তাছাড়া এর পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। তাই অধিক পরিমাণে সবুজ সার ফসল চাষ করে জমিতে জৈব পদার্থের ঘাটতি পূরণ এবং উদ্ভিদপুষ্টি সরবরাহ করা অত্যাবশ্যক। এতে একদিকে ফসলের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। অপরদিকে পরিবেশও থাকবে বিশুদ্ধ।
লেখক: নাহিদ বিন রফিক, টেকনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট, কৃষি তথ্য সার্ভিস ও পরিচালক, কৃষি বিষয়ক আঞ্চলিক অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ বেতার, বরিশাল।