ক্রীড়া প্রতিবেদক ॥ ১৯ ওভারে লক্ষ্য ১৩৬, রান তাড়া করা দল পুরো ওভার খেলে উইকেট হারাল মাত্র ৩টি। তারপরও রান মোটে ১১৩! ম্যাচ হেরে যাওয়া ওল্ড ডিওএইচএসের ব্যাটিংয়ের ধরন ছড়াল বিস্ময়। জাগাল একটি প্রশ্নও, জয়ের তাড়না তাদের কতটা ছিল? হারের শঙ্কা ঠেলে শেষ পর্যন্ত সহজ জয়ের হাসিতেই মাঠ ছাড়ল আবাহনী। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাবের বিপক্ষে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে আবাহনী লিমিটেডের জয় ২২ রানে। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার বৃষ্টিতে ১৯ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের দারুণ পারফরম্যান্স ছাপিয়ে আলোচনায় ওল্ড ডিওএইচএসের ব্যাটিংয়ের ধরন। এমনিতে আগ্রাসী ওপেনার আনিসুল ইসলাম ইমন ২৭ বলে করেন ২০ রান। আরেক ওপেনার রাকিন আহমেদ প্রায় ১৫ ওভার উইকেটে থেকে আউট হন ৪৪ বলে ৪৩ করে। প্রথম ৮ ওভারে এই দুজন করেন মাত্র ৩৬ রান! আগের ম্যাচে ৭৮ রানের ইনিংস খেলা মাহমুদুল হাসান জয় তিনে নেমে এবার করেন ২০ বলে ১৫। দলের ইনিংস তাই এগোয় ধুঁকতে ধুঁকতে। উইকেট যদিও মন্থর ছিল, তবু কেবল ৩ উইকেট হারিয়ে কোনো দলের বলপ্রতি রানও করতে না পারার নজির টি-টোয়েন্টিতে যথেষ্টই বিরল। আবাহনীর সাইফ ৪ ওভারে ১৫ রান দিয়ে নেন প্রতিপক্ষের সর্বোচ্চ স্কোরার রাকিনের উইকেট। এর আগে আসল কাজ করেন তিনি ব্যাট হাতে। দলের বিপর্যয়ে ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন সাতে নেমে। ক্যারিয়ার সেরা ৪০ রানের ইনিংস খেলেন মাত্র ১৯ বলে। আবাহনী ব্যাটিংয়ে নামে টস হেরে। কবজির চোটে এই ম্যাচেও খেলতে পারেননি লিটন দাস। মোহাম্মদ নাঈম শেখের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন মুনিম শাহরিয়ার। দুজনই আউট হন বেশ কিছুক্ষণ উইকেটে কাটিয়ে। বাঁহাতি নাঈম খেলেছেন ঢঙয়েই, বাউন্ডারির ফাঁকে ছিল অনেক ডট বল। ৩ চার ও ১ বাউন্ডারির ইনিংসে আউট হন ২১ বলে ২৩ করে। আরেক ওপেনার মুনিমও একই পথের পথিক। একটি করে ছক্কা ও চারে ১৩ বলে ১৬। দুঃসময়ের চক্রে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত ১০ রানে জীবন পেয়েও ১১ রানে ধরা পড়েন লং অন সীমানায়। আবাহনীর আগের ম্যাচের নায়ক মুশফিকুর রহিম ৬ রানে বোল্ড হন বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসানকে ইনসাইড আউট খেলার চেষ্টায়। এরপর মোসাদ্দেক হোসেনও যখন বিদায় নেন ছক্কা মারার চেষ্টায়, ১৩ ওভারে আবাহনীর রান তখন ৫ উইকেটে ৭২। সেখান থেকে আবাহনীকে উদ্ধার করে সাইফ ও আফিফ হোসেনের জুটি। ষষ্ঠ উইকেটে ৪০ বলে ৬১ রানের জুটি গড়েন এই দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। এই জুটি গড়ে ওঠায় ওল্ড ডিওএইচএসের নিজেদের দায়ও কম নয়। আফিফ শূন্য রানে বেঁচে যান রকিবুলকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে। ১০ রানে আবার তার ক্যাচ ছাড়েন রকিবুল, এবার মোহাইমিনুলের বলে। জুটির মূল চালিকাশক্তি ছিলেন সাইফই। উইকেটে যাওয়ার পর থেকেই তিনি খেলতে থাকেন শট। ওল্ড ডিওইএচএসের আঁটসাঁট বোলিং এলোমেলো হয়ে যায় তার আক্রমণে। শেষ ওভারে আনিসুল ইসলাম ইমনকে মারেন দুটি ছক্কা। ওই ওভার থেকে আসে ১৮ রান। ২ চার ও ৩ ছক্কায় সাইফ করেন ৪০। আফিফ শেষ পর্যন্ত টিকে থেকেও ঝড় তুলতে পারেননি। অপরাজিত থাকেন ২৯ বলে ২৭ করে। তাতে আরও বাড়েনি দলের রান। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওই পুঁজিতেই ধরা দেয় অনায়াস জয়, লিগে যা আবাহনীর টানা দ্বিতীয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আবাহনী: ১৯ ওভারে ১৩৫/৬ (নাঈম ২৩, মুনিম ১৬, শান্ত ১১, মুশফিক ৬, আফিফ ২৭*, মোসাদ্দেক ৮, সাইফ উদ্দিন ৪০, শহিদুল ০*; মোহাইমিনুল ৪-০-২৫-২, রশিদ ৪-০-৩০-১, রকিবুল ৩-০-১০-২, পায়েল ২-০-২৮-০, মোহাম্মদ শান্ত ৪-০-১৫-০, রায়ান ১-০-৯-০, আনিসুল ১-০-১৮-১)।
ওল্ডডিওএইচএস: ১৯ ওভারে ১১৩/৩ (আনিসুল ২০, রাকিন ৪৩, মাহমুদুল ১৫, মোহাইমিনুল ১০*, রায়ান ১৯*; সাইফ উদ্দিন ৪-০-১৫-১, আরাফাত সানি ৪-০-১৩-১, তাইজুল ৪-০-২৯-০, মেহেদি রানা ৩-০-২০-০, শহিদুল ২-০-২৫-১, মোসাদ্দেক ২-০-১০-০)।
ফল: ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে আবাহনী ২২ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।