1. andolonerbazar@gmail.com : AndolonerBazar :

স্বজনের কান্নায় ভারি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের বাতাস

  • সর্বশেষ আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন, ২০২১

জহুরুল ইসলাম ॥ তখন বেলা পৌনে বারোটা। এক নারীর বিলাপে হাসপাতাল ওয়ার্ডের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। তাকে জড়িয়ে ধরে নানা সান্তনা বাক্যে কান্না থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছেন তারই এক নারী স্বজন। কান্নায় ভেঙে পড়া ওই নারীর নাম নাসিমা খাতুন। বাড়ি কুষ্টিয়া পৌরসভার মিনাপাড়া মহল্লায়। স্বামী মিলন হোসেন কিছুক্ষণ আগে হাসপাতালের  বেডে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মারণ ভাইরাস করোনা মাত্র ৪৫ বছর বয়সেই  কেড়ে নিয়েছে মিলনের প্রাণ। অকালে স্বামীকে হারিয়ে চারদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে নাসিমার। তাই সদ্য স্বামীহারা ওই নারীর বুকফাটা আর্তনাদ এর কাছে সব সান্তনা বাক্য যেন তুচ্ছ। নাসিমা খাতুনের সাথে থাকা নারী স্বজন জানান গত ২১ জুন মিলন হোসেনের শরীরে করানো শনাক্ত হয়। পরদিন ২২ জুন তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তার দু’দিনের মাথায় সেখানে বৃহস্পতিবার বেলা এগারটার পর তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এমন হৃদয় ভাঙ্গা দৃশ্যের অবতারণা এখন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে প্রতিদিন ঘটছে। কোনদিন নয় জন, কোনদিন সাতজন আবার কোনদিন পাঁচজন -এভাবেই মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মুখ। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে প্রথমদিকে করোনা ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ছিল  ৪১টি। জেলায় করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকার সাথে সাথে সেই শয্যা সংখ্যা উন্নীত হয়েছে ১০০টিতে। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। শয্যা ছাড়িয়ে এখন আক্রান্ত মানুষের ঠাঁই হয়েছে বারান্দায়, করিডোরে পেতে রাখা সারি সারি শয্যায়। এ ওয়ার্ডে বর্তমানে ভর্তি আছে ১৭০ জন মানুষ। বাধ্য হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শয্যা সংখ্যা ২০০ তে উন্নীত করেছেন। কিন্তু তাতে কি  শেষ রক্ষা হবে? তেমনটি মনে পড়ছে না কেউ। কারণ, এখন প্রতিদিন জেলায় ১০০ জনের  বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তাই হাসপাতালের সবগুলো  শয্যার যদি করোনা রোগীদের জন্য ছেড়ে দেয়া হয় তাতেও কুল পাওয়া যাবে না। যা ভাবিয়ে তুলেছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাদের। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আর এম ও) ডাক্তার তাপস কুমার সরকার বলেন, তাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু তারা সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন রোগীদের সেবা দিতে। তিনি বলেন, তাদের লোকবল সঙ্কট রয়েছে, রয়েছে অক্সিজেন সংকটও। তবে সীমিত সম্পদ দিয়ে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা ব্যবস্থা সচল রাখার। তিনি বলেন জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা যথেষ্ট অভাব রয়েছে।  জেলা জুড়ে লকডাউন চললেও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। কারণে-অকারণে ঘরের বাইরে  বের হচ্ছেন, এখানে-ওখানে জটলা করছেন, আড্ডা দিচ্ছেন। এ কারণে রোগী শনাক্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। তিনি বলেন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সচেতনয়তার কোনো বিকল্প নেই।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো খবর
© All rights reserved ©2021  Daily Andoloner Bazar
Site Customized By NewsTech.Com