জহুরুল ইসলাম ॥ যার চোখের আলো নেই তার কাছে পৃথিবীটা কেবল একদলা নিকষ কালো আঁধার। সেই আঁধারের মাঝে যেন এক চিলতে আলো কুষ্টিয়ার মেয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অঞ্জনা রানী হালদার। অন্ধত্বকে জয় করে তিনি অর্জন করেছেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। সঙ্গীত সাধনাতেও পিছিয়ে নেই এই প্রতিবন্ধী। অভাবের সংসারে জন্ম নেয়া এই অঞ্জনা আজ সকলের অনুপ্রেরণা। টিউশনি করে সংসারের হালধরা অঞ্জনার স্বপ্ন ভালো একটা চাকরির।
কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মান্দারী হালদারের চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট অঞ্জনা হালদার। কিন্তু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়ায় অঞ্জনার বাবা-মায়ের যেন আপসোসের সীমা ছিল না। বাবা-মায়ের নিদারুণ কষ্টের আগুনে ঘি ঢালতে ছাড়তেন না প্রতিবেশীরা। তারা নানা রকমের কটুক্তি করতেন অঞ্জনাকে নিয়ে। তবুও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এই সন্তানকে অতি আদরে বড় করে তোলেন বাবা-মা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় অঞ্জনাকে ভর্তি করা হয় স্কুলে। প্রতিবেশি কিংবা সহপাঠিদের অসহযোগিতা আর তুচ্ছতাচ্ছিল্যতার মধ্যেও শেষ পর্যন্ত স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন তিনি। অঞ্জনা বলেন, তিনি যখন স্থানীয় প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তখন প্রতিবেশিরা যেমন নানা রকম টিপ্পনী কাটত তেমনি শিক্ষকরাও কথা শোনাতে ছাড়তেননা। অঞ্জনা জানান, সে সময় এক শিক্ষক বলেছিলেন, ‘আমি এক কলম লিখে দিতে পারি এই মেয়ে কোনদিন এসএসসি পাস করতে পারবেনা।’ তবে কেবল এসএসসি নয়, অঞ্জনা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শেষ ধাপ অর্থাৎ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে নিয়েছেন কঠোর অধ্যাবসয়ে। পাশাপাশি তিনি সংগীত চর্চাও করেন পরম যতেœ। এরই মধ্যে সঙগীতে স্বীকৃতিও পেয়েছেন। অঞ্জনা বলেন, জন্ম থেকেই দারিদ্রতার সঙ্গে নিরন্তর লড়াই তার। কিছুদিন আগে সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী চা দেকানী বাবা মান্দারী হালদার সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। এ কারণে সংসারে অভাব অনটন আরো বেড়েছে। কয়েকটি টিউশনী করে সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করছেন তিনি। তবে অনেকেই তার কাছে ছেলেমেয়েদের পড়াতে চাননা। গান শেখাতেও চান না। তাই অঞ্জনার প্রত্যাশা যোগ্যতানুযায়ী একটি সরকারী চাকরির। চাকরি পেলে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে চান তিনি।
অঞ্জনার বাবা মান্দারী হালদার বলেন, অনেক কষ্ট করে তার মেয়ে পড়ালেখা শেষ করেছেন। তবে মেয়ে এখনো একটি ভাল চাকরী না পাওয়ায় দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছেন তিনি। কেবল অঞ্জনার বাবা-মা নন যে, প্রতিবেশিরা এক সময় অঞ্জনাকে দেখে নাক সিটকাতো তারাও আজ তাকে সমীহ করে। মেয়েটি যাতে একটি ভালো চাকরী পেয়ে সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে পারে সে জন্য সরকারের সুদৃষ্টি চেয়েছেন তার প্রতিবেশিরা। তবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অঞ্জনা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেলেও স্থানীয়দের কাছে অনুপ্রেরণা।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply