ঢাকা অফিস ॥ সংগঠনের তহবিল আত্মসাত ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ অর্ধশত নেতার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই লক্ষ্যে দুদক ৬ সদস্যের একটি অনুসন্ধানি টিম গঠন করেছে। হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে সংগঠনের তহবিল, বিভিন্ন মাদ্রাসা, এতিমখানা ও ইসলামী প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা এবং ধর্মীয় কাজে পাওয়া বৈদেশিক সহায়তা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুদকের গোয়েন্দারা যাচাই-বাছাইয়ে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় কমিশন থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দুদক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন শীর্ষ নেতা দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন ও অবৈধ অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ করেছে এমন অভিযোগ সামনে রেখে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) হেফাজতের অর্ধশতাধিক নেতার ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের তথ্য যাচাই-বাছাই করে। সেখানে হিসাবে গরমিল পাওয়া যায়। ইতিমধ্যে বিএফআইইউ থেকে যার একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দুদকে পাঠানো হয়েছে। আর দুদকও সেটি আমলে নিয়েছে। তাছাড়া যে নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছিল তাদের মধ্যে রয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মুহাম্মদ মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সহসভাপতি মুহাম্মদ মাহফুজুল হক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, মহাসচিব সৈয়দ ফয়জুল করীম, আল-হাইয়্যাতুল উলয়াও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ প্রমুখ। তাছাড়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ইতিমধ্যে হেফাজতে ইসলামের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে ৩১৩ জনকে চিহ্নিত করেছে। সূত্র জানায়, গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে ইসলামীর কেন্দ্রী কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের ব্যাংক হিসাবে ৬ কোটি টাকার অস্তিত্ব পেয়েছে। মামুনুল হকের দুটি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। ওসব তথ্য-উপাত্ত আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। আর দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকায় যখন সম্পদ করা হয় বা ওই টাকা পাচার, স্থানান্তর, রূপান্তর করা হয়, তখনই সেটি দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ। এদিকে এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান জানান, হেফাজতের শীর্ষ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উৎস থেকে অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। ওসব অভিযোগ ও দুদকের নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কমিশন থেকে সম্প্রতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে একটি অনুসন্ধান টিমও গঠিত হয়েছে। অনুসন্ধানের পর অপরাধ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।