1. admin@andolonerbazar.com : : admin admin
  2. andolonerbazar@gmail.com : AndolonerBazar :

আগাম সবজি চাষের জন্য চারা উৎপাদন ক্রমে প্রসার লাভ করছে

  • সর্বশেষ আপডেট : সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

 

কৃষি প্রতিবেদক ॥ ॥ বীজবপনের কয়েকদিন আগে বীজতলার মাটি ২০ থেকে ২৫ সেমি গভীর করে ঝুরঝুরা ও ঢেলা মুক্ত করে তৈরি করতে হবে। বীজতলা সাধারণত ১০ থেকে ১৫  সেমি উঁচু করে তৈরি করতে হবে। মাটি, বালি ও পচা গোবর সার বা কম্পোস্ট মিশিয়ে বীজতলার মাটি তৈরি করতে হয়। মাটি উর্বর হলে রাসায়নিক সার না দেয়াই ভালো। চারা উৎপাদন করে যে সব সবজি চাষ করা হয় তার মধ্যে বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, ব্রকলি,  বেগুন, টমেটো, ক্যাপসিকাম, লাউ ও মিষ্টিকুমড়া কাঁচা মরিচ উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে আগাম শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন সময়ে সবজি চাষের জন্য চারা উৎপাদন ক্রমে প্রসার লাভ করছে। সাধারণত প্রতিকূল আবহাওয়ায় বিশেষ করে বন্যার সময় বীজতলায় চারা উৎপাদনের জন্য বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে সবজির চারা কাঠের বা প্ল্যাস্টিকের ট্রে, পলিথিনের ব্যাগে, মাটির টবে, গামলায়, থালায়, কলার খোলে উৎপাদন করা যায়। ছোট আকারের পলিথিনের ব্যাগে বা অন্যান্য মাধ্যমে এদের চারা উৎপাদন করলে সহজে শেকড় ও মাটিসহ চারা রোপণ করা যায়। মুন্সীগঞ্জজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে সবজির চারা উৎপাদন করা হয়। তবে সবচেয়ে বেশি চারা উৎপাদন করা হয় সদর উপজেলায়। এ উপজেলার কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এ  জেলায় প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার সবজির চারা বিক্রি হয়ে থাকে। সদর উপজেলার কৃষক আলকাছ মিয়া বলেন, গত ১০ বছর অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করে দেখেছি সবজির চেয়ে চারা উৎপাদনে প্রচুর লাভ। তাই এ বছর প্রথমবারের মতো ৩০ শতাংশ জমিতে চারার আবাদ করেছি শীতকাল বিভিন্ন শাকসবজি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এ সময় নানা ধরনের শাকসবজির চারা চাষ হয়। আর এর উৎপাদন অনেক বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন সময়ে শাকসবজির চারা চাষ করা একটু কষ্টসাধ্য। কারণ এ সময় রোদ, বৃষ্টি, খরা, শিশাবৃষ্টিসহ নানান ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকে। সেজন্য একটু সতর্কতার সঙ্গে এসময় বিভিন্ন সবজির চারা চাষ করতে হয়। এ সময় গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি, গ্রীষ্মকালীন টমেটো, বরবটি, পটল, শসা, ঝিঙা, করলা, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, গিমা কলমি, পুঁইশাক, মুখিকচু, মানকচু, মৌলভীকচু, পানিকচু, শজনে, মিষ্টিকুমড়া ও চালকুমড়ার চারা চাষ করা যায়। মুন্সীগঞ্জে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। গুণগতমান ভালো হওয়ায় জেলার চাহিদা মিটিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেশব্যাপী। বীজ  রোপণের মাত্র ২২ দিনে এসব চারা বিক্রয়যোগ্য হয়। আর অল্প সময়ে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় কৃষকও দিন দিন ঝুঁকছেন চারা উৎপাদনে। চারা চাষিরা বলেন, মুন্সীগঞ্জে উৎপাদিত চারার বীজ মূলত জাপান এবং চীন থেকে আসে। এসব বীজের কেজি ৪০ হাজার টাকা থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। উৎকৃষ্ট বীজ থেকে চারা উৎপাদন করায় চারার মান অনেক ভালো হয়। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার কেপিরবাগ, ভট্টাচার্যের বাগ, দেওয়ানবাজার, রামসিং, কালচি পাড়া, দেওসার, রামপাল, ধলাগাঁও, সিপাহিপাড়াসহ টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পাইকপাড়া, আবদুল্লাহপুর, সোনারং এবং টঙ্গীবাড়ী ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় চারা উৎপাদিত হয়ে থাকে। মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় শীতকালীন লাউ, কুমড়া, মরিচ, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকলির চারা উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতি বছর এসব চারা বিক্রি হয় কয়েক কোটি টাকায়। দেখা যায়, বাড়ির পাশে উঁচু জমিতে বীজতলা বানিয়ে সবজির চারা আবাদ করা হয়েছে। চারাগুলো রোদ, বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য উপরে বাঁশের চাটাই দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। এসব চারা প্রখর রোদ থেকে রক্ষার জন্য সকালে ঢেকে  দেয়া হয়, আবার বৃষ্টি হলেও ঢেকে রাখা হয়। যশোর সদর থেকে চুয়াডাঙ্গা বগুড়ার শাহনগর পরিচিত ‘সবজির চারার গ্রাম’ নামে। পৌষ মাসে আগাম ও মধ্যম রবি সবজির পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন এবং সবজির চারা সংগ্রহ করতে হবে। নাবি রবি সবজির পরিচর্যা, ফলগাছের পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন এবং অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে। যারা বাণিজ্যিকভাবে মৌসুমি ফুলে চাষ করতে চান তাদের এ সময় ফুলগাছের বেশি করে যতœ নিতে হবে- বিশেষ করে সারের উপরি প্রয়োগ করতে হবে। মাঘ মাসে আলু, পেঁয়াজ, রসুনের  গোড়ায় মাটি তুলে দেয়া, সেচ, সার প্রয়োগ, টমেটোর ডাল ও ফল ছাঁটা, মধ্যম ও নাবি রবি সবজির সেচ, সার, গোড়াবাঁধা, মাচা দেয়া এবং আগাম খরিফ-১ সবজির বীজতলা তৈরি বা মাদা তৈরি বা বীজবপন করতে হবে। বীজতলায় চারা উৎপাদনে বেশি সচেতন হতে হবে।  কেননা, সুস্থ-সবল রোগমুক্ত চারা রোপণ করতে পারলে পরবর্তী সময়ে অনায়াসে ভালো ফসল বা ফলন আশা করা যায়। ফলগাছের পোকামাকড়, রোগাবালাই দমন ও অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে। বীজতলার জমি অপেক্ষাকৃত উঁচু হওয়া উচিত- যাতে বৃষ্টির বা বন্যার পানি দ্রুত নিষ্কাশন করা যায়। ছায়াবিহীন, পরিষ্কার এবং বাতাস চলাচলের উপযোগী স্থানে বীজতলা করা প্রয়োজন। পানির উৎসের কাছাকাছি বাড়ি, খামার বা অফিসের কাছাকাছি হওয়া উচিত। বীজতলার মাটি বেলে দোআঁশ বা দোআঁশ এবং উর্বর হওয়া ভালো।  বেলেমাটি বেশি হলে কাদামাটি, গোবর বা কম্পোস্ট মিশিয়ে অথবা অতিরিক্ত কাদামাটি হলে বালু, কম্পোস্ট বা গোবর মিশিয়ে মাটির জল ধারণ ও নিষ্কাশনের উপযোগী করে বীজতলার মাটি উন্নত করা যায়। বীজবপনের পূর্বে বীজতলার মাটি বিভিন্ন পদ্ধতিতে শোধন করা যায়। এতে অনেক মাটিবাহিত রোগ, পোকামাকড় আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে দমন করা যায়। যেমন-  সৌরতাপ ব্যবহার করে, জলীয় বাষ্প ব্যবহার করে; ধোঁয়া ব্যবহার করে এবং রাসায়নিক দ্রব্য যেমন ফরমালডিহাইড ব্যবহার করে; কাঠের গুঁড়া পুড়িয়ে; পোলট্রি রিফিউজ ব্যবহার করে। বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে সবচাইতে সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি হলো সৌরতাপ ব্যবহার করে বীজতলার মাটি শোধন করা। বীজতলায় বপনের পূর্বে সবজি বীজ কয়েকটি পদ্ধতিতে শোধন করা যায়। এগুলোর মধ্যে গুঁড়ো রাসায়নিক ওষুধ দ্বারা বীজ শোধন পদ্ধতি বর্তমানে সর্বাধিক প্রচলিত ও কম ঝামেলা পূর্ণ। প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম প্রোভ্যাক্স-২০০ বা ক্যাপটান ব্যবহার করে বীজ শোধন করা যায়। বীজ শোধনের ফলে বিভিন্ন সবজির অ্যানথ্রাকনোজ, লিফস্পট, ব্লাইট ইত্যাদি রোগ ও বপনপরবর্তী সংক্রমণ রোধ সম্ভব হয়। বীজ শোধনকারী রাসায়নিক দ্রব্যাদি বিষাক্ত বিধায় শোধিত বীজ, শোধন সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। চারা গজানোর পর থেকে ১০-১২ দিন পর্যন্ত হালকা ছায়া দ্বারা অতিরিক্ত সূর্যতাপ থেকে চারা রক্ষা করা প্রয়োজন। পানি সেচ একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচর্যা তবে বীজতলার মাটি দীর্ঘ সময় বেশি ভেজা থাকলে অঙ্কুরিত চারার রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। চারার শেকড় যথেষ্ট বৃদ্ধি পেলে রোদ কোনো ক্ষতি করতে পারে না, তখন এটি বরং উপকারী। চারা গজানোর ১০-১২ দিন পর বীজতলায় প্রয়োজন মতো দূরত্ব ও পরিমাণে চারা রেখে অতিরিক্ত চারাগুলো যতœ সহকারে উঠিয়ে দ্বিতীয় বীজতলায় সারি করে  রোপণ করলে মূল্যবান বীজের সাশ্রয় হবে। আয়তনের দিক দিয়ে ছোট দেশ হলেও বাংলাদেশে সবজি উৎপাদনে বিপুল সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বর্তমানে সবজি উৎপাদনে চীন ও ভারতের পরে বাংলাদেশ তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। অতীতেও যেমন সবজি উৎপাদনে আঞ্চলিক প্যাটার্ন ছিল, এখনো তা অক্ষুন্ন আছে। যশোর, কুমিল্লা, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, জামালপুর, রংপুর, জয়পুরহাট, নাটোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ কয়েকটি জেলায় সবজি উৎপাদনের বিপ্লব ঘটেছে, যা মাত্র ৪ দশক আগেও ছিল অভাবনীয়। এর ফলে শিক্ষিত যুব সমাজ নতুন নতুন প্রযুক্তি ও ইনোভেটিভ ধ্যানধারণা নিয়ে সবজি উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে। পাহাড় ও উপকূলীয় অঞ্চলে সবজি চাষ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় বাড়ির আঙিনা, বাঁধ, ঘেরের পাড়ে এমনকি মাছ চাষের জলাশয়গুলোর ওপর চাউনি দিয়ে লতানো সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে।

লেখক ঃ কৃষিবিদ আজিজুল ইসলাম

Please Share This Post in Your Social Media

আরো খবর
© All rights reserved ©2021  Daily Andoloner Bazar
Site Customized By NewsTech.Com