কৃষি প্রতিবেদক ॥ গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন প্রাণ অতিষ্ঠ, খুঁজে ফিরে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস সেই সময় বাঙ্গি প্রাণে এনে দেয় প্রশান্তি। দূর করে শরীরের ক্লান্তি। গ্রীষ্মের ফলগুলোর মধ্যে বাঙ্গি একটি অন্যতম ফল। গ্রীষ্মকালে আরামদায়ক ফল হিসেবে বাঙ্গির তুলনা হয় না। পুষ্টিতে ভরপুর এই ফলটি সব বয়সের মানব দেহের জন্য উপকারী। বাঙ্গি স্বাস্থ্যকর ফল। পাকা বাঙ্গির রয়েছে ম-ম সৌরভ। বাঙ্গির অনেক গুণ। কাঁচা বাঙ্গি সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। বাঙ্গিতে আমিষ, ফ্যাটি-এসিড ও খনিজলবণ আছে। মূত্রস্বল্পতা কিংবা ক্ষুধামান্দ্য দূর করতে পারে বাঙ্গি। বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ আছে- যা খাবার হজম করতে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। গরম ও অতিরিক্ত রোদের জন্য হয় সানবার্ন, সামার বয়েল, হিট হাইপার পাইরেক্সিয়া। বাঙ্গির রস এই অসুখগুলো প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এসিডিটি, আলসার, নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধামান্দ্য, নারীদের হাড়ের ভঙ্গুরতা রোধ করতে সাহায্য করে বাঙ্গি। বাঙ্গির অপর নাম খরমুজ, কাঁকুড়, ফুটি বা বানি। দেশের প্রায় সব এলাকায় গ্রীষ্মকালে বাঙ্গি জন্মে। তরমুজের পর এটিই অধিক প্রচলিত শসাগোত্রীয় ফল। ধারণা করা হয়, বাঙ্গির জন্ম ইরান বা আফগানিস্তানে। আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়াও এ ফলের চাষ করা হয়। এখন বাঙ্গির মৌসুম। বাজার ভরপুর গ্রীষ্মের এই ফলে। লতানো গাছে ধরা বাঙ্গিকে অনেকে ফুটি বলেও ডাকে। তবে এ রসালো ফলটির মিষ্টি কম হওয়ায় অনেকে খেতে আগ্রহ দেখায় না। কিন্তু পুষ্টিগুণে এর জুড়ি নেই। তাই বাঙ্গিকে অবহেলা নয়। বাঙ্গির পুরোটাই জলীয় অংশে ভরপুর। এটি ভিটামিন ‘সি’, শকর্রা ও সামান্য ক্যারোটিন সমৃদ্ধ। বাঙ্গি ত্বকের বয়সের ছাপ দূর করে। এটি ত্বকের কোষ নষ্ট হয়ে গেলে তা ঠিক করতে সাহায্য করে। বাঙ্গির প্রোটিন কম্পাউন্ড ত্বককে করে সুন্দর। বাঙ্গি মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করুন। দূর করে ব্রণ, একজিমার সমস্যায় ভুগলে প্রতিদিন এক গ্লাস বাঙ্গির শরবত খান। এ ছাড়াও বাঙ্গি ভালো করে বেন্ড করে ছেঁকে রসটুকু বের করে তা লোশনের মতো ব্যবহার করুন। এতে ব্রণ এবং একজিমার সমস্যা দূর হয়। বাঙ্গিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘বি’। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ‘ইন্সনিটোল’- যা আমাদের চুল নতুন করে গজাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া প্রতিরোধ করে থাকে। তাই নিয়মিত বাঙ্গি খেলে চুলের অনেক উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া ব্লেন্ড করা বাঙ্গি শ্যাম্পু করার পর চুলে কন্ডিশনারের মতো ব্যবহার করাও ভালো। বাঙ্গিতে আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ডায়াটারি ফাইবার- যা খাবার হজমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এই ফলের পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সক্ষম। বাঙ্গি মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহে সহায়তা করে শরীরের অবসাদ ভাব দূর করে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুব উপকারী বাঙ্গি। নিয়মিত বাঙ্গির শরবত খেলে খাবারে অরুচি, নিদ্রাহীনতা, আলসার ও অ্যাসিডিটি দূর হয়। তা ছাড়া এই ফলে নেই কোনো চর্বি বা কোলেস্টেরল। তাই বাঙ্গি খেলে মুটিয়ে যাওয়ার ভয় নেই একেবারেই। দেশে প্রধানত দুই জাতের বাঙ্গি দেখা যায়, বেলে ও এঁটেল বাঙ্গি। বেলে বাঙ্গির শাঁস নরম। খোসা খুব পাতলা, শাঁস খেতে বালু বালু লাগে। তেমন মিষ্টি নয়। অন্যদিকে, এঁটেল বাঙ্গির শাঁস কচকচে, একটু শক্ত এবং তুলনামূলকভাবে মিষ্টি। পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল বাঙ্গি। ইফতারে বাঙ্গি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। এটি সালাদ বা শরবত হিসেবে রাখা যায়। বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটমিন-বি থাকে- যা মাথার চুল পড়া বন্ধ এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। গরমকালে বাঙ্গি অনেকগুলো রোগ থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। সূর্যের তাপে চামড়া পুড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। গরমের কারণে হওয়া হিটস্ট্রক, উচ্চ রক্তচাপ, পানিশূন্যতা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে ফলটি। বাঙ্গিতে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে। এতে খাদ্য উপাদান হিসেবে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম যথেষ্ট পরিমাণে আছে। প্রতিদিনের ইফতারির খাদ্য তালিকায় বাঙ্গি রাখা হলে এসব উপাদান সহজেই পাওয়া যাবে। করোনা মহামারির কারণে সারা বিশ্বেই ইমিউনিটি বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এজন্য প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ডি ও মিনারেল জতীয় খবার খেতে বলা হচ্ছে। বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি থাকায় এটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে। বাঙ্গি শরীরে রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। এজন্য গর্ভবর্তী মায়েরা ফলটি বেশি বেশি খেতে পারেন। বাজারের বিভিন্ন জুস না কিনে মৌসুমি ফলগুলো নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
লেখক ঃ ইমরান সিদ্দিকী, সূত্র: যায়যায়দিন।