কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে প্রায় ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩ মিটার দৈর্ঘ্য ও প্রস্তের বক্স কালভার্ট সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সকালে সেতুর কাজ বন্ধ করা হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চলাচলকারীরা। সেতুটি উপজেলার পান্টি – বাঁশগ্রাম সড়কস্থ চাঁদপুর ইউনিয়নের মোহননগর এলাকায় অবস্থিত। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয়রা বলছেন, সেতু ও সড়কের পাশে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি রয়েছে। ঠিকাদার ও প্রকৌশলী কর্তৃপক্ষ খুঁটি অপসারণ না করে সেতুর নকশা পরিবর্তন করে সেতুর কাজ করছে। সেজন্য আগে খুঁটি অপসারণ করে পুরাতন সেতুর স্থলে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।কিন্তু বৈদ্যুতিক খুঁটি এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলছে ঠেলাঠেলি। স্থানীয়রা বলছে ঠিকাদার আর প্রকৌশলী বিভাগ খুঁটি অপসারণ করবে। আর প্রকৌশলী বলছে খুঁটিটি বিদ্যুত বিভাগ অপসারণ করবে। কিন্তু পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা বলছেন, যার প্রয়োজন, তিনি নির্ধারিত খরচ প্রদানের মাধ্যমে খুঁটিটি অপসারণ করবে। জানা গেছে, পুরাতন বক্স কালভার্ট সেতুটির স্থলে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে। সেজন্য প্রায় মাসখানেক আগে পুরাতন সেতুটি অপসারণ করে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য বেড কাটা হয়েছে। বেড ও সড়কের পাশেই রয়েছে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি। খুঁটি রেখে কাজ করলে সেতুর বেড দক্ষিণে কিছুটা চাপানো লাগবে। সেজন্য স্থানীয়রা সেতু নির্মাণে বাঁধা সৃষ্টি করেছে। তবে খুঁটি অপসারণে কেউ দাঁয়িত্ব না নেওয়ায় এগোচ্ছে না সেতুর কাজ। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে চলাচলকারীরা। আরো জানা গেছে, উপজেলার পান্টি, চাঁদপুর ও বাগুলাট ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ এবং পার্শ্ববর্তি ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার একাংশ মানুষ কুষ্টিয়া শহরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে ওই সড়ক দিয়ে। সড়কের মাঝে সেতু ভেঙে পুকুর কেটে রাখায় সকল ধরনের মানুষ ও যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সড়কের মাঝে ছোটখাটো একটি পুকুর কাটা হয়েছে। পুকুরের উত্তর পাশে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি। আর দক্ষিণ পাশে মাটি দিয়ে বিকল্প জরাজীর্ণ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। মানুষ ও তিনচাকার যানবাহন গুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। আর মালবাহী গাড়ি গুলো প্রায় তিন কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করছে। নেই কোনো সতর্কীকরণ সাইবোর্ড। সড়কের উপড়ে রাখা রয়েছে নির্মাণ সামগ্রী ইটের খোঁয়া ও পাথর। এসময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হেড মিস্ত্রি উজ্জল শেখ জানান, মাসখানেক আগে পুরাতন সেতু ভাঙা হয়েছে। সকালে ১০ জন শ্রমিক নিয়ে নতুন সেতুর বেড কাটার কাজ চলছিল। তবে খুঁটি অপসারণ না করে কাজ করায় স্থানীয়রা তা বন্ধ করে দিয়েছেন। তার ভাষ্য, কাজ বন্ধ ও খুঁটির বিষয় তিনি উপজেলা প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। মোহননগর এলাবার মৃত আলমগীর হোসেনের ছেলে শান্ত বিশ্বাস সজল। নির্মাণাধীন সেতুর সামনেই রয়েছে তার মুদি দোকান। তিনি জানান, ঠিকাদার বিদ্যুতের খুঁটি না সরিয়ে সেতু দক্ষিণপাশে চাপিয়ে কাজ করছে। এতে তার দোকানপাট ও স্থানীয়দের ঘরবাড়ি হুমকিতে পড়বে। সেজন্য তিনি সহ স্থানীয়রা খুঁটি অপসারণ করে নকশা অনুযায়ী কাজ করার দাবি জানিয়েছেন। আকব্বর মোল্লা (৬০) নামের একজন কৃষক জানান, খুঁটির জন্য কাজে ঝামেলা হচ্ছে। কাটা সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। সরকারি ভাবে খুঁটি সরিয়ে দ্রুত কাজ শেষ করার দাবি জানান তিনি। ভ্যান চালক শোমছের আলী জানান, একমাস হয়ে গেল সেতু ভাঙে পুকুর কাটেছে। কাজের কোনো গতি নেই। মানুষের চলাচলের খুব ভোগান্তি হচ্ছে। এলাকাবাসী কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম। তিনি জানান, সেতুর নকশা ঠিকই আছে। জনগণ অহেতুক ঝামেলা করছে। আর খুঁটির কারণে কাজে বিলম্ব হচ্ছে। তাঁর ভাষ্য, জনস্বার্থে খুঁটি অপসারণের দাঁয়িত্ব বিদ্যুত অফিসের। এলজিইডিতে কোনো বরাদ্দ নেই। জানতে চাইলে কুমারখালী পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মো. আনছার উদ্দিন জানান, যার খুঁটি অপনারণ করা প্রয়োজন। তিনি বা সেই দপ্তর নির্ধারিত ফি প্রদানের মাধ্যমে খুঁটি অপসারণ করবেন। এখানে পল্লী বিদ্যুতের কিছু করার নেই। জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করেছেন ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি জানান, এলাকাবাসী, প্রকৌশলী ও বিদ্যুত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে।