কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে শুকনা গড়াই নদীতে গোসল করতে গিয়ে ডুবে মামাতো – ফুফাতো ভাই – বোনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের জয়নাবাদ বাসিন্দাপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত একজনের নাম মোছা. সেফা খাতুন (১৪)। সে কুমারখালী পৌরসভার মো. শামিমের মেয়ে ও কুমারখালী সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। আরেক জনের নাম মো. শাহাজাদা (১০)। সে চাপড়া ইউনিয়নের জয়নাবাদ বাসিন্দা পাড়া এলাকার আলমগীর হোসেনের ছেলে। নিহতরা সম্পর্কে মামাতো – ফুফাতো ভাই – বোন। তারা সাতার জানতো না বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। এঘটনায় এলাকায় শোকের মাতম চলছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, শেফা ঈদের পরদিন বাবা – মায়ের সাথে নানা বাড়ি জয়নাবাদ বেড়াতে এসেছিল। বুধবার সকাল ১০ টার দিকে তার বাবা তাকে বাড়িতে নেওয়ার জন্য এসেছিল। কিন্তু সে বাড়ি না ফিরে দুপুরে মামাতো ভাই – বোন ও মামী – খালাদের সাথে গড়াই নদীতে গোসল করতে গিয়েছিল। সেসময় সেফা, সাহাজাদা, আলিফ (১১), আশা (১২) ও জাকিয়া সুলতনা (১৩) নামে পাঁচ মামাতো – ফুফাতো ভাই – বোন নদীর কিনারের এক গর্তে ঝাঁপ দিয়ে ডুবে যায়। পরে মামী শিমু খাতুন ও স্থানীয়া টের পেয়ে তাদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে শেফা ও সাহাজাদাকে কর্তৃবরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। দুপুরে সরেজমিন জয়নাবাদ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সাহাজাদার বাড়িতে স্বজন, প্রতিবেশী ও উৎসুক জনতা ভিড় করেছে। চলছে শোকের মাতম। কাঁন্নায় ভেঙে পড়েছে নিহতদের বাবা, মাসহ স্বজনরা। স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে স্বজনদের শান্তনা দিচ্ছেন। এসময় নিহত শেফার মা খালেদা খাতুন বিলাপ করতে করতে বলেন, আমার কি হলোরে! মা তুই কই গেলিরে। সকালে বাড়ি গেলি এমন হতোনারে। আমি এখন কিভাবে বাড়ি যাব। কাকে নিয়ে বাঁচব। বাবা মো. শামীম বলেন, ঈদের পরদিন থেকে শেফা নানাদের বাড়ি। আজ সকালে বাড়ি নিতে এসেছিলাম। কিন্তু অনেক জোড়াজুড়ি করেও নিতে পারিনি। দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা আলিফ জানায়, বড় মানুষরা একটু পিছনে ছিল। তারা ৫ জন আগে আগে গিয়ে নদীর গর্তে ঝাঁপ দেয়। সেসময় সে বাদে ৪ জন ডুবে গিছিল। পরে শিমু মামী উদ্ধার করেছে। মামী শিমু জানান, গলা সমান পানির একই গর্তে সবাই ঝাঁপ দিয়ে ডুবে গিছিল। ওরা কেউ সাতার জানত না। তিনি দ্রুত গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক মঞ্জু জানান, নদীতে গোসল করতে গিয়ে গর্তে পরে দুইজন শিশু মারা গেছে। এঘটনায় এলাকায় শোকের মাতম বয়ছে। কুমারখালী থানার ওসি মো. আকিবুল ইসলাম জানান, গড়াই নদীতে গোসল করতে গিয়ে মামাতো – ফুফাতো ভাই বোনের মৃত্যু হয়েছে। কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন কুষ্টিয়া – ৪ আসরের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ। তিনি জানান, ছোট – বড় সবাইকে সাতার শেখা উচিৎ। এবং সন্তানদের প্রতি সব সময় খেয়াল রাখতে হবে।