নিজ সংবাদ ॥ আসছে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে গরু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী খামারীরা। পরিশ্রম করে গরুগুলো কোরবানির উপযুক্ত করেছেন খামারিরা। অতি যতেœ পালন করা এসব গরুর পেছনে খামারিদের শ্রম ও অর্থ দুটোই ব্যয় হয় বেশ। খামারিরা আশায় থাকে কোরবানি ঈদে বাজারে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখবে বলে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সুত্রে জানা যায়, একটি পৌরসভা ও ১১ টি ইউনিয়নে এবছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ৩ হাজার ৫৯৭ টি খামারে মোট ২৩ হাজার ৫৬৬ টি হৃদপুষ্টকরন পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। তন্মধ্যে ষাঁড় ৯ হাজার ৮৩২টি, বলদ ৫ হাজার ৯২৭ টি, মহিষ ১৭ টি এবং ছাগল ৭ হাজার ৩৫৭ টি ও ভেড়া ২৫৯ টি। উপজেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ১২ হাজার ২০৭ টি। গত বছর খামারির সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭৬৭ টি। সেখানে পশু প্রস্তুত করা হয়েছিল ২৫ হাজার ৬৯৯ টি। নানাবিদ কারণে এবছর খামারির সংখ্যা কমেছে ১৭০ টি। এবছর লাভের আশায় পশু পরিচর্যা করেছেন খামারিরা। বাজারে দ্রুব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি পশু পালনে পরিচর্যা খরচও বেড়েছে কয়েকগুণ। সেজন্য পশু বিক্রি ও লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন উপজেলার পশু খামারি ও পালনকারীরা। আসছে পবিত্র ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহার বিশেষ আকর্ষন কোরবানির পশু জবাহ। করোনার মহামারি ও গোখাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে গেল দুই – তিন বছর তেমন লাভ করতে পারেনি খামারিরা। অনেকে আবার লাভ ছাড়ায় বিক্রি করেছিলেন পশু। লোকসানের ভয়ে কেউবা ছেড়ে দিয়েছে পশুপালন। এবছর পরিমিত লাভের আশায় পশু পরিচর্যা করেছেন খামারিরা। কিন্তু এবার দ্রুব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি আরো বেশি। পরিচর্যা খরচও বেড়েছে কয়েকগুণ। সেজন্য পশু বিক্রি ও লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পশু খামারি ও পালনকারীরা। উপজেলার পুশু পালন কারিরা বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখেই খামারিরা সারাবছর পশু হিসেবে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া লালন পালনে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেন। তাই ঈদে পশু বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরনের লোকসান গুণতে হয় তাদের। শুধু খামারিরা নয়, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বিধবা মহিলা বা সাধারণ কৃষক থেকে শুরু করে হাজার হাজার সরকারি,বে- সরকারি চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ গরু, ছাগল, ভেড়া পালন করেন। তারাও পরিচর্যা খরচ, বেঁচাবিক্রি ও পরিমিত লাভের অংশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। এছাড়াও লেখাপড়ার পাশাপাশি অনেক শিক্ষিত যুবক-যুবতী পেশা হিসেবে বেঁছে নিয়েছে ডেইরি ফার্ম বা গরু – ছাগল মোটা তাজাকরণ পেশা। এই কারনেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠেছে বড় বড় খামার।সেখানে সারাবছর কসাইদের কাছে পশু বিক্রি করা হলেও স্পেশাল পশু তৈরি করা হয় কোরবানি ঈদে অধিক লাভে বিক্রির জন্য। উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের জোতপাড়া গ্রামের খামারি আব্দুল মতিন মোল্লা বলেন, গেল বছর তাঁর খামারে কুরবানির জন্য ২০ টি হৃদপুষ্টকরণ পশু ছিল। করোনার পর থেকেই শুধু লোকসান হচ্ছে তাঁর। এবারের জন্য খামারে প্রায় ৮ থেকে ১২ মণ ওজনের ৯ টি ষাঁড় গরু আছে। প্রায় সাত মাস পূর্বে ১৯ লক্ষ টাকা দিয়ে গরু গুলো কিনেছিলেন তিনি। প্রতিটি গরুতে তাঁর প্রায় ৮০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। তাঁর ভাষ্য, ৯ টি গরু ৩২ থেকে ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি করা গেলে তিনি লাভবান হবেন। ওই খামারে মাসিক ১৬ হাজার টাকা চুক্তিতে কাজ করছেন শ্রমিক কালু প্রামাণিক। তিনি বলেন, গেল কয়েক বছর শুধু লচ ( লোকসান) আর লচ। এবার জিনিসপাতির দাম বেশি। গরুর কি হবে তা তিনি বুঝতে পারছেন না। একই গ্রামের খামারি প্রেম কুমার ঘোষের স্ত্রী সবিতা ঘোষ বলেন, তাঁদের খামারে এবছর ৫ টি হরিয়ান জাতের গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় ছয়মাস আগে গরু গুলো প্রায় ১০ লাখ টাকায় কিনেছিলেন। এখন খরচ খচ্চাসহ দাম পড়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, তিনি আরো কিছু গরু কিনে ট্রাকে করে চট্টগ্রাম ঈদের বাজারে গরু গুলো বিক্রি করবেন। গত দুইবছরে গরুতে তাঁর প্রায় ১১ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ৩ হাজার ৫৯৭ টি খামারে মোট ২৩ হাজার ৫৬৬ টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। তন্মধ্যে ষাঁড় ৯ হাজার ৮৩২টি, বলদ ৫ হাজার ৯২৭ টি, মহিষ ১৭ টি এবং ছাগল ৭ হাজার ৩৫৭ টি ও ভেড়া ২৫৯ টি। উপজেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ১২ হাজার ২০৭ টি। গত বছর খামারির সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭৬৭ টি। সেখানে পশু প্রস্তুত করা হয়েছিল ২৫ হাজার ৬৯৯ টি। নানাবিদ কারণে এবছর খামারির সংখ্যা কমেছে ১৭০ টি। পুশু খাদ্যের দাম বেড়েছে সেই কারণে এবার কিছুটা সমস্যার মধ্যে আছে খামারিরা।