1. admin@andolonerbazar.com : : admin admin
  2. andolonerbazar@gmail.com : AndolonerBazar :
শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রকে শেখ হাসিনা : আগে নিজের ঘর সামলানো উচিত শ্রমজীবি মানুষের মাঝে রোটারী ক্লাব অফ কুষ্টিয়া ওয়েস্টে’র পানি ও স্যালাইন বিতরণ দৌলতপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা, সন্তান সংসদ ও অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের উদ্যোগে স্যালাইন বিতরণ ভেড়ামারা প্রার্থীদের প্রতিক বরাদ্দ সমাপ্ত, জমে উঠেছে ভোটের মাঠ কুষ্টিয়ায় কাভার্ড ভ্যানের সাথে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত দুই দৌলতপুরে পৃথক অগ্নিকান্ডে ২টি বাড়ি পুড়ে গেছে দৌলতপুরে কল আছে জল নাই : বিপাকে জনজীবন গুণী শিক্ষক মোসা. আখতার বানুর অবসজনিত বিদায় অনুষ্ঠান কুষ্টিয়ায় মহান মে দিবসের আলোচনা সভায় ডিসি এহেতেশাম রেজা :  শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু কুষ্টিয়ায় যুবকের ২ বছরের কারাদন্ড

কৃষিতে জলবায়ুগত বিরূপ ঝুঁকি মোকাবিলার টেকসই উপায় হলো ফসলবীমা কার্যক্রম

  • সর্বশেষ আপডেট : শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

 

কৃষি প্রতিবেদক ॥ জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশের কৃষি  বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কৃষিতে জলবায়ুগত বিরূপ ঝুঁকি মোকাবিলার একটি  টেকসই উপায় হলো ফসলবীমা কার্যক্রম। ইন্স্যুরেন্স বা বীমা হলো সামাজিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার একটি অর্থনৈতিক উপায়। তেমনি ক্রপ ইন্স্যুরেন্স হলো ফসল উৎপাদনে মানুষের সাধ্যের বাহিরে বিভিন্ন ঝুঁকির ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার একটি অর্থনৈতিক পদ্ধতি। বিভিন্ন ধরনের অনিশ্চয়তা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল উৎপাদনে কৃষক সবসময় ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এর মধ্যে কিছু কিছু ঝুঁকি কৃষক নিজে সমাধান করতে পারলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো বড় ধরনের ঝুঁকির জন্য সামাজিক ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়। সাম্প্রতিক সময়ে হাওড়ে আগাম বন্যা কিংবা উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় কৃষিতে ভয়াবহ ক্ষতিসাধন করছে। কৃষকের জন্য এ ধরনের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি হলো শস্যবীমা কার্যক্রম। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, রোগবালাই ও  পোকামাকড়ে ফসলের ক্ষতি হলে কৃষককে রক্ষার জন্য সাধারণত শস্যবীমা চালু করা হয়। ফসলহানির পর কৃষক শস্যবীমার মাধ্যমে বিনিয়োগকৃত পুঁজির কিছুটা ফেরত পাবে- যা দিয়ে আবার বিনিয়োগ করে কৃষি উৎপাদন চালু রাখতে পারবে। ১৯৪০ সালে পৃথিবীতে প্রথম শস্যবীমা চালু করে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি চালু করা হয়। আমেরিকাতে বর্তমানে প্রচলিত শস্যবীমা কার্যক্রম শত বছরের পরীক্ষানিরীক্ষার ফসল। এই উপমহাদেশে ভারতে সর্বপ্রথম শস্যবীমা কার্যক্রম চালু করা হয়। ১৯৭৩ সালে কৃষক পর্যায়ে তুলা ও চীনাবাদামের ওপর শস্যবীমা কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ সময় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের সরকারিভাবে ৫০ ভাগ প্রিমিয়াম ভর্তুকি প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সালে প্রথম শস্যবীমা প্রকল্প চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় সাধারণ বীমা করপোরেশনের ওপর। প্রাথমিকভাবে দুটি জেলার দুটি উপজেলা ৫টি কৃষক সমবায় সমিতিকে শস্যবীমার আওতায় আনা হয়। প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পূর্বে পলিসি গ্রহীতার সংখ্যা ছিল ২৩৭৬ জন। বীমাকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ১১ কোটি ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রিমিয়াম বাবদ আয় হয়েছিল ৩৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা। ফসলের ক্ষতিপূরণ বাবদ দাবি পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৯৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। মূলত সরকারি ভর্তুকি বা রি-ইন্সুরেন্স সুবিধা না থাকা, কারিগরি সহযোগিতার অভাব এবং সুনির্দিষ্ট  কোনো নীতি বা লক্ষ্য না থাকায় প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়ে যায়। এ ছাড়া প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা কর্তৃক মাঠ পরিদর্শনের পর দাবি পরিশোধ করা হতো বিধায় এটি ছিল সময় সাপেক্ষ পদ্ধতি। দেশে পরে বেশ কিছু এনজিও ও উন্নয়ন সহযোগী কৃষকদের জন্য শস্যবীমা চালু করে। এর মধ্যে রয়েছে আরডিআরএস-বাংলাদেশ। তারা পিকেএসএফের সহায়তায় বেসরকারিভাবে প্রথম কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে শস্যবীমা চালু করে। বর্তমানে সিনজেন্টা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিভিন্ন সহযোগী এনজিওর সহায়তায় উত্তরাঞ্চলের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ১০টি জেলায় ‘সুরক্ষা’ নামে শস্যবীমার একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। চার বছর মেয়াদি এ প্রকল্পটি প্রায় দু’লাখ  তেত্রিশ হাজার প্রান্তিক কৃষককে আবহাওয়া সূচকভিত্তিক শস্যবীমার আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ওই সময় তারা প্রায় ১০ লাখ কৃষককে শস্যবীমা সম্পর্কে অবহিত করে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত প্রায় দু’হাজার কৃষক শস্যবীমা গ্রহণ করেছে- যার ৬০ শতাংশই হলো নারী। প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বাংলাদেশ। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন এ  দেশের কৃষকদের নিত্যসঙ্গী। নতুন করে যোগ হয়েছে উত্তরাঞ্চলের খরা এবং দক্ষিণাঞ্চলের জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা। আর ফসল উৎপাদনে পোকামাকড় ও  রোগবালাইয়ের আক্রমণ, সুদখোর মহাজনদের উৎপাত তো রয়েছেই। সম্প্রতি অসাধু বীজ ব্যবসায়ীদের কারণে কৃষকদের সর্বস্বান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এসবের  ভেতর দিয়েই চলছে আমাদের আবহমান কৃষি। সময়ের পরিক্রমায় জীবন সংগ্রামে পরাজিত কৃষকরা মাঝারি থেকে হয়েছে প্রান্তিক আর প্রান্তিক থেকে হয়েছে ভূমিহীন। বাংলাদেশের প্রায় ৭০ ভাগ কৃষকই ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও ভূমিহীন। এসব কৃষকদের সুরক্ষার জন্য ক্ষুদ্রঋণের মতো ক্ষুদ্র শস্যবীমা কার্যক্রম গ্রহণ করা দরকার। সরকারের কৃষিতে প্রদত্ত ভর্তুকির একটি অংশ এ খাতে বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। বাংলাদেশে শস্যবীমা কার্যক্রম চালানোর জন্য দক্ষ, প্রশিক্ষিত জনবল বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো  নেই। এটি জনপ্রিয় করার জন্য শস্যবীমার সুফল সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করা দরকার। শুরুতে প্রণোদনা হিসেবে প্রান্তিক ও ভূমিহীন কৃষকদের শতভাগ প্রিমিয়াম ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া বড় খামারিদের ক্ষেত্রে, সরকারি ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে শস্যবীমা বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। তবে তার পূর্বে এ সংশ্লিষ্ট আইনগুলো যুগোপযোগী করতে হবে। আমাদের দেশের অতীত অভিজ্ঞতা ও পার্শ্ববর্তী দেশের শস্যবীমা কার্যক্রমের ভিত্তিতে দেশে নতুন করে দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। কৃষিই এ দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হলেও কৃষকদের সুরক্ষার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাই এখনো গড়ে ওঠেনি। আগামী দিনের কৃষির সুরক্ষায় যা অপরিহার্য। বর্তমান কৃষি ও কৃষকবান্ধব সরকার শস্যবীমা কার্যক্রমকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।

লেখক ঃ প্রফেসর আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ, অধ্যাপক : উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগ,  শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

আরো খবর
© All rights reserved ©2021  Daily Andoloner Bazar
Site Customized By NewsTech.Com