ঢাকা অফিস ॥ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘গুরুতর’ অসুস্থ হলেও তাকে ‘বন্দি দশায়’ থাকতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি অভিযোগ করেন, তাদের নেত্রীকেই এখন ‘সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের’ শিকার হতে হচ্ছে। “তিনি এখনো বন্দি অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। গতকাল রাতে তিনি এত অসুস্থ হয়েছিলেন যে, চিকিৎসকরা সবাই বলছিল, আর বোধহয় বেশি সময় পাওয়া যাবে না। “আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া, তাকে তারা আপাতত চিকিৎসা দিয়ে সেই অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।” বুধবার দুপুরে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় অসুস্থ হয়ে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরে এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে তাকে চিকিৎসা দেন। সন্ধ্যার পরে তার অবস্থার উন্নতি হয়। এর আগে বিকালে খালেদার অবস্থার অবনতি হয়েছে জানিয়ে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তবে পরে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা গুলশানের বাসায় কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে হাসপাতালে নেওয়ার পরিকল্পনা বদলান। বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ম্যাডারের অবস্থা আগের মতই আছে। বাসায় মেডিকেল বোর্ডের ডাক্তারদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাধীন। সার্বক্ষণিক তার শারীরিক অবস্থা মনিটর করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।” দেশবাসী ও দলের নেতা-কর্মীদের কাছে বিএনপি চেয়ারপারসনের আশু আরোগ্য কামনায় দোয়া চান অধ্যাপক জাহিদ। ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিস, আর্থরাইটিস ও হৃদরোগে ভুগছেন। দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদ- হলেও সরকারের নির্বাহী আদেশে তিনি ২০২০ সালের মার্চ থেকে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্ত আছেন। এই সময়ে তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৩ মার্চ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপারসন। মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে ভর্তি হয়ে এক দিন পরই বাসায় ফেরেন। তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড গতবছর অক্টোবরে জানায়, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভারের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। দ্রুত ‘বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে’ তার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকার তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি না দেওয়ায় বিদেশ থেকে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ঢাকায় এনে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার লিভারে ট্রান্সজুগলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোরটোসিসটেমিক সান্ট (টিপস) সম্পন্ন করা হয়। সর্বশেষ বুধবার খালেদা জিয়ার সাজার স্থগিত রেখে সাময়িক মুক্তির মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়িয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আগের মতেই শর্ত দেওয়া হয়েছে, খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।