1. admin@andolonerbazar.com : : admin admin
  2. andolonerbazar@gmail.com : AndolonerBazar :

তরমুজ ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে

  • সর্বশেষ আপডেট : সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩

 

কৃষি প্রতিবেদক ॥ দেশি-বিদেশি নানা জাতের তরমুজে সয়লাব বাজার। গরমের ক্লান্তি দূর করতে এক ফালি তরমুজের বিকল্প নেই। পুষ্টিগুণের দিক  থেকেও ফলটির জুড়ি মেলা ভার। তরমুজে আছে লাইকোপেন, অ্যামাইনো এসিড, ভিটামিন, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। এছাড়া তরমুজের প্রায় ৯২ শতাংশই পানি। ফলে এই গরমে ডিহাইড্রেশন দূর করতে তরমুজের বিকল্প  নেই। ভিটামিন এ, সি ও বি পাওয়া যায় ফলটি থেকে। তরমুজে আরও মেলে লাইকোপেন ও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। তরমুজে থাকা লাইকোপেন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তরমুজে পানির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে, সেই সঙ্গে থাকে আঁশ। তাই তরমুজ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও বাওয়েল মুভমেন্ট ঠিক রাখে। তরমুজে ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়ামসহ বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকে- যা হৃদরোগ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।

তরমুজে থাকা কোলিন নামের একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের জন্য উপকারী। মাংসপেশির মুভমেন্ট, দেহকোষের মেমব্রেন গঠন, মস্তিষ্ক গঠন ও নার্ভের কার্যকারিতা বাড়াতে কোলিন বেশ সহায়ক। তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। তাই এর সবচেয়ে বড় উপকারিতা হচ্ছে এটি তীব্র গরমেও আপনার শরীরকে পানিশূন্য হতে দেবে না। ত্বক ভালো রাখে তরমুজে থাকা ভিটামিন সি। তরমুজে থাকা অ্যামিনো এসিড মাসলের সুস্থতা বজায় রাখে। তরমুজ ভিটামিন সি ও বি ৬ সমৃদ্ধ। এ দুটি উপাদান শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। খুব সামান্য ক্যালোরি আছে তরমুজে। এক কাপ তরমুজ থেকে মাত্র ৪৬ ক্যালোরি পাওয়া যায়। ফলে নিশ্চিন্তে খেতে পারেন এটি। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে তরমুজে থাকা ভিটামিন এ। বাংলাদেশের কৃষি বিভাগ বলছে দেশে এবার রেকর্ড পরিমাণ প্রায় ষোল লাখ টন তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে এবং দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোসহ দেশের প্রায় সর্বত্রই তরমুজ উৎপাদনে দারুণভাবে সফল হয়েছে চাষিরা।

কৃষি সম্প্ররসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের সূত্রে জানা যায়, দেশের নানা জায়গায় শিক্ষিত তরুণরা তরমুজ উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছেন এবং এটিই এবারের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদনের মূল কারণ। প্রসঙ্গত, তরমুজ মূলত গ্রীষ্মকালীন ফল। যদিও এখন বারমাসি জাতের তরমুজ ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। তবে বাজারে সাধারণত সবুজ রংয়ের  ডোরাকাটা ও মসৃণ তরমুজ দেখা যায়- যার ভেতরটা লাল, সেটিই বেশি দেখা যায়। এর বাইরে গত কয়েক বছর ধরে উৎপাদন বাড়ছে হলুদ তরমুজের, যার ভেতরটা টকটকে লাল এবং খেতে দারুণ সুস্বাদু।

তরমুজ সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে ওঠে। এটাই তরমুজের প্রধান মৌসুম। কিন্তু সম্প্রতি দেশের বাজারে এ সময় ছাড়া অন্য সময়েও তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ তরমুজ বেশি পাওয়া যায়। এ তরমুজকে অনেকে নাম দিয়েছেন ‘বারোমাসি তরমুজ’। ছোট, লম্বাটে, ডিম্বাকার, কালো খোসা, ভেতরে টকটকে লাল শাঁসের তরমুজগুলো অসময়ে ওঠার কারণে বাজারে চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। কোনো স্থানে হলুদ রঙের  খোসার অমৌসুমি তরমুজেরও চাষ হচ্ছে। দিন দিন অমৌসুমে তরমুজ চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। হবিগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, মৌলভীবাজার, ভোলা প্রভৃতি জেলায় কিছু কৃষক ইতোমধ্যে এই বারোমাসি তরমুজ চাষ করে বিঘাপ্রতি প্রায়  দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন।

বারোমাসি তরমুজ চাষের জন্য বেড ঢাকতে কালো রংয়ের পলিথিন শিট দিয়ে মালচিং করতে হয়। এক বিঘা জমির জন্য ১১ কেজি ওজনের একটি পলিথিন  রোল দরকার হয়। পলিথিন রোল ৩ ফুট বা ১ মিটার চওড়া হলে চলে। মালচিং শিট বা পলিথিন বিছানোর জন্য বিশেষ দক্ষতার দরকার হয়। বেডের এক পাশ থেকে মালচিং শিট বিছানো শুরু করতে হবে। রোলের মাঝে একটা চিকন বাঁশ বা পাইপ ঢুকিয়ে নিলে রোল টানতে সুবিধা হয়। মালচিং শিট বিছাতে ৩-৪ জন লোক হলে ভালো হয়। দু’জন রোল টানবে, এক বা দু’জন শিট বিছানোর পর বেডের দুইপাশ থেকে মাটি তুলে পলিথিনের পাশটা মাটিচাপা দিয়ে বেডের সঙ্গে চেপে দেবে। মালচিং শিট যে প্রান্ত থেকে বিছানো শুরু করতে হবে সে প্রান্ত শিটের ধারটা বেড থেকে কিছুটা বাইরে  বের করে মাটিচাপা দিয়ে আটকে দিতে হবে। টানার সুবিধার্থে সেই প্রান্ত দুটো বাঁশের খুঁটার সঙ্গে বেঁধেও দেয়া যেতে পারে। মাটিচাপা দেয়া ও বেডে পলিথিন শিট বিছানোর পর খুঁটা তুলে ফেলা যেতে পারে। মালচিং শিট স্থাপনের পর জমি সেচ দিয়ে ভালো করে ভিজিয়ে দিতে হবে। জমিতে ৫-৭ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের আগে দেখতে হবে পলিব্যাগের মাটিতে রস আছে কিনা। না থাকলে মাটি চারা রোপণের কিছুক্ষণ আগে হালকা করে ভিজিয়ে দিতে হবে। ব্লেড দিয়ে পলিব্যাগ কেটে বা পলিব্যাগের নিচে টিপ দিয়ে চেপে পলিব্যাগ থেকে চারা বের করা যায়। চারা  রোপণের পর চারার গোড়ায় ঝাঁঝরি দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে। বিকালে চারা লাগানো ভালো।

তরমুজ মূলত বালি-পলি মাটিতে চাষ হয়। কিন্তু, পলি মালঞ্চিং পদ্ধতিতে এখন এঁটেল মাটিতেও তরমুজ ফলানো সম্ভব হচ্ছে। বিঘায় অনায়াসেই চার টন ফলন পাওয়া যায়। প্রতি টন তরমুজ বিক্রি করে দাম পাওয়া যায় ২০ হাজার টাকা। পরিবেশবান্ধব মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে অসময়ে তরমুজ উৎপাদনে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছেন উপকূলের কৃষকরা। সাধারণ পদ্ধতিতে বছরে একবার ফলন হলেও পরিবেশবান্ধব এ পদ্ধতি বছরজুড়েই চাষ করা যায় রসালো ফলটি। অসময়ে চাষ হওয়ায় অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা আর বাজারে চাহিদাও বেশি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকাসহ  দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে কৃষকের। ফলে দিন দিন মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে উপকূলীয় কৃষকদের। তরমুজ খেতে সুস্বাদু। দেখতে অনেক সুন্দর। থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা নতুন জাতের এ ফল। তরমুজ জাতীয় এ ফল অল্প দিনেই বাজারজাত করা যায়। বিদেশি এই তরমুজগুলোর বাংলাদেশি নামও আছে। বাংলাদেশে সুইট ব্ল্যাক-২ তরমুজ জেসমিন নামে, এশিয়ান-২ তরমুজ বাংলালিংক নামে ও হলুদ তরমুজ নামে পরিচিত।

তরমুজ একটি উৎকৃষ্ট ও তৃপ্তিদায়ক ফল। বলা যায়, গরমকালের উপকারী ফল তরমুজ। কেননা, গরমের দিনে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে লবণ ও পানি বেরিয়ে যায়- যা পূরণ করতে সাহায্য করে তরমুজ। তাই তরমুজের চাহিদাও বেশি। চাহিদা থাকার কারণে চাষিরাও তরমুজ চাষে বেশ আগ্রহী।

তরমুজ মূলত আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে পাকে। রোপণের তিন থেকে চার মাস পর ফসল সংগ্রহ করা যাবে। ফল পেকেছে কিনা, তা বোঝা খুব কঠিন। ফল পাকলে বোঁটা শুকিয়ে বাদামি রং ধারণ করে। পাকলে তরমুজের  খোসার ওপরের সূক্ষ্ম লোম মরে যায় ও খোসা চকচকে দেখায়। আঙুল দিয়ে  টোকা দিলে যদি ড্যাব ড্যাব শব্দ করে, তাহলে বুঝতে হবে ফল পেকেছে। অনেক ফল বা সবজির রং লাল করে লাইকোপিন, এটি একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের প্রতিবন্ধক হিসেবে এটি কাজ করে সুস্থ জীবনধারা উপহার দেয়। অন্যান্য ফল বা সবজি, এমনকি টমেটোর তুলনায়ও তরমুজে বেশি লাইকোপিন রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা তাই হলুদ কিংবা কমলা রংয়ের পরিবর্তে লাল তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাদের মতে, তরমজু যত বেশি পাকা হবে, ততই ভালো। একদিনে একজন সুস্থ মানুষের যে পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ দরকার, তার ৩০ শতাংশ  বেশি পূরণ করে এক টুকরো তরমুজ। চোখ সুস্থ রাখে এ ফল। তরমুজের ভিটামিন ‘এ’, ‘বি-৬’ ও ‘সি’ চামড়া রাখে নরম, মসৃণ ও কোমল। তরমুজ দিয়ে ফেস মাস্কও তৈরি করা যায়। এক টেবিল চা চামচ তরমুজের রস ও সমপরিমাণ দইয়ের মিশ্রণ শুষ্ক ও নি®প্রাণ চামড়ায় ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন,  মোলায়েম হবে চামড়া। ডেজার্টে রাখতে পারেন তরমুজ। এতে নেই কোনো চর্বি; কোলেস্টেরলের পরিমাণ খুবই কম ও কোনো সোডিয়াম নেই।

লেখক ঃ ইমরান সিদ্দিকী

Please Share This Post in Your Social Media

আরো খবর
© All rights reserved ©2021  Daily Andoloner Bazar
Site Customized By NewsTech.Com