1. admin@andolonerbazar.com : : admin admin
  2. andolonerbazar@gmail.com : AndolonerBazar :

তুলা দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে

  • সর্বশেষ আপডেট : মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

 

কৃষি প্রতিবেদক ॥ বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো কৃষিনির্ভর। দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। তবে বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও এখনো আমদানি নির্ভরতা কমেনি। তুলা একটি কৃষি ফসল। কিন্তু তুলা উৎপাদনে আমরা পিছিয়ে আছি। তুলা একটি আন্তর্জাতিক মানের শিল্প ফসল- যা বিশ্বব্যাপী ‘সাদা সোনা’ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৭৫ লাখ বেল তুলার চাহিদা থাকলেও এর মাত্র ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ দেশে উৎপাদন হচ্ছে। আর পোশাক খাতে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ তুলা বাইরে দেশ থেকেই আমদানি করতে হয়। তুলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্য, ইতিহাস, সভ্যতা ও অর্থনীতি। এটি আমাদের দ্বিতীয় মৌলিক চাহিদা, বস্ত্রের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। তুলার ইতিহাস পৃথিবীতে ৭০০০ বছরের পুরাতন। আর্য যুগ  থেকে ব্রিটিশ আমলের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের ঘরে ঘরে কার্পাসের চাষ হতো, ঘরে ঘরে চরকায় সুতা তৈরি হতো, তাঁতিরা কাপড় বুনে দেশের চাহিদা মেটাতো। বর্তমান সরকার অন্য ফসলের মতো তুলা উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। তুলা উন্নয়ন বোর্ড করা হয়েছে। সারা বিশ্বেই তুলা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। সেখানে দেশে তুলার উৎপাদন মাত্র দুই লাখ বেলের মতো। আগে এক লাখ বেলের নিচে উৎপাদন হতো। সম্প্রতি তুলা উন্নয়ন বোর্ডের হাইব্রিড উন্নত জাতের তুলা উদ্ভাবন ও চাষের ফলে তুলা উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে। বিপুল পরিমাণ তুলা আমদানিতে বছরে ২৪ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। যদিও আমদানিকৃত তুলা ভ্যালুঅ্যাডের মাধ্যমে সুতা ও কাপড়ের আকারে বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। এসব তুলা এ দেশে উৎপাদন করতে পারলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব।

দেশে তুলা চাষ সম্প্রসারণ ও উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐকান্তিক ইচ্ছায় ১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর তুলা উন্নয়ন বোর্ড গঠিত হয়। এটি দেশে তুলা গবেষণা, তুলা চাষ সম্প্রসারণ, বীজ উৎপাদন ও বিতরণ প্রভৃতি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। চলতি মৌসুমে ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে তুলা চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ৭৭ হাজার বেল আঁশ তুলা। খাদ্য উৎপাদনে কোনো বিঘœ না ঘটিয়ে তুলা চাষ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। তামাক, লবণাক্ত, চর ও বনাঞ্চল এলাকায় তুলা চাষ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

বিশ্বে প্রায় ৭৫টি দেশে তুলা চাষ করা হয়। বিশ্বে তুলা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ৪০তম অবস্থানে রয়েছে। তুলা উৎপাদনে প্রতিনিধিত্বকারী দেশগুলোর মধ্যে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো, তুরস্ক, পাকিস্তান ও ব্রাজিল অন্যতম। বাংলাদেশে তিনটি শস্য মৌসুমের মধ্যে খরিফ-২তে মাত্র ০.৫২ শতাংশ জমিতে তুলা চাষ করা হয়। তুলা থেকে আঁশ ছাড়াও ভোজ্যতেল, খইল, জ্বালানি উপজাত হিসেবে পাওয়া যায়। ভোজ্যতেলে খুব কম পরিমাণে কোলেস্টেরল থাকে এবং তুলার বীজ থেকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে তেল পাওয়া যায়- যা উচ্চ  প্রোটিনসমৃদ্ধ এবং সয়াবিন তেলের চেয়েও পুষ্টিকর। খইলে রয়েছে উচ্চ প্রোটিন ২৪ শতাংশ, উচ্চফ্যাট ২০ শতাংশ হারে এবং ৪০ শতাংশ ক্রুড আঁশ- যা পশু ও মৎস্যখাদ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

তুলার ইতিহাস অনেক দিনের। ব্রিটিশ আমলের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের ঘরে ঘরে কার্পাসের চাষ হতো, ঘরে ঘরে চরকায় সুতা তৈরি হতো, তাঁতিরা কাপড় বুনে দেশের চাহিদা মেটাত। বিশ্ব বিখ্যাত মসলিন কাপড় ও অন্যান্য সুতি বস্ত্র সমগ্র ইউরোপে রপ্তানি হতো। বিনিময়ে এসেছে বহু মূল্যবান ধাতু। সে সময় বাংলাদেশের নিতান্ত দীনহীন নারী-পুরুষের গায়েও দেখা যেত সোনা ও রুপার আংটি, অলংকার, মন্দিরে মন্দিরে দেব-দেবীর স্বর্ণমূর্তি। ম্যানচেস্টারের কাপড় বাংলাদেশি কাপড়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারত না বলে ইংল্যান্ডে বাংলাদেশি কাপড় নিষিদ্ধ  ঘোষিত হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তুলা উন্নয়ন বোর্ড গঠন করে পাকিস্তানে নেওয়া ৩২৫ জন চাষিকে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে ৭৯৬ একর জমি তাদের মধ্যে তুলা চাষের জন্য বরাদ্দ প্রদান করেন।

এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে তুলাচাষের শুভ সূচনা ঘটে। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কোনো নিজস্ব ভবন ছিল না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তুলা উন্নয়ন বোর্ডের জন্য একটি নিজস্ব ভবনের জায়গা ও অর্থ বরাদ্দ করেন।

২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে এক লাখ সাতাত্তর হাজার বেল তুলা উৎপাদিত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ তুলা উৎপাদনের কর্মকৌশল হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে চাষ উপযোগী জমি নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৭৯ লাখ হেক্টর এবং তুলার উন্নত জাত ও হাইব্রিড জাত  তৈরির জন্য নেওয়া হয়েছে গবেষণা প্রকল্প। তুলাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুর গবেষণা, সংরক্ষণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও তুলা চাষ সম্প্রসারণের জন্য একটি মেগা প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। সব কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশেই ২০ লাখ  বেল তুলা উৎপাদন ২০৪১ সালের মধ্যেই সম্ভব হবে।

জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে নতুন এ জাতটি সহজেই চাষ করা যাবে। এজন্য খুব বেশি সেচের প্রয়োজন হবে না। এ ছাড়া এটি চরম জলবায়ু সহনশীল একটি জাত। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো অন্যান্য জাতের তুলনায় এ জাতের তুলা অন্তত ৩০ দিন আগে সংগ্রহ করা যায়। এর পাশাপাশি উৎপাদনে কম জায়গা লাগে। নতুন জাতটি সম্ভাব্য হেক্টরপ্রতি ফলন প্রায় সাড়ে ৫ টন। অন্য জাতের হেক্টরপ্রতি ফলন ৪ টন।

তুলা বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। বর্তমান বার্ষিক জিডিপির ১১.১৬ শতাংশ আসে এই বস্ত্র খাত থেকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই সেক্টরে আয় করেছিল ৩৪.১৩ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ তুলা আমদানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয়। আফ্রিকা, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ উল্লেখযোগ্য দেশ থেকে তুলা আমদানি করা হয়।

লেখক ঃ ম ইমরান সিদ্দিকী

Please Share This Post in Your Social Media

আরো খবর
© All rights reserved ©2021  Daily Andoloner Bazar
Site Customized By NewsTech.Com