দৌলতপুর প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সরকারী জলমহালের অবৈধ দখলদারদের হামলার শিকার হয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জসহ কমপক্ষে ৬ জন। এদের মধ্যে শাহেদ (২০) নামে একজন ছাত্রলীগ কর্মী র্ছরা গুলিতে আহত হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। তাকে ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বিলবোয়ালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিল বোয়ালিয়া এলাকায় ১২.১৮ একরের একটি সরকারী জলমহাল (বিল বোয়ালিয়া বিল) রয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বহু বছর ধরে ওই বিলে অবৈধভাবে মাছ চাষ করে আসছে। বাংলা ১৪৩১ সালের জন্য কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন বিলটি দখলমুক্ত করতে ইজারার সিদ্ধান্ত নেয়। এ লক্ষে দরপত্র আহ্বান করা হলে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে বিলের ইজারা পান বোয়ালিয়া এলাকার বাসিন্দা কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ। গত পহেলা বৈশাখ দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কমকর্তার পক্ষে সার্ভেয়ার আহসানুল হক বিলের দখল বুঝিয়ে দেন শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জকে। পরে ২রা বৈশাখ চ্যালেঞ্জ ও তার সহযোগিরা বিলে মাছের পোনা ছাড়েন। গতকাল শুক্রবার বিলের পরিচর্যা কাজে যান ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ। সেখানে দুপুরের খাওয়া দাওয়ার জন্য রান্নারও আয়োজন করা হয়। এ সময় বিলের অবৈধ দখলদাররা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালালে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা ফিরোজ হোসেন বলেন, ৩০/৪০ জন লোক হঠাৎ করেই চ্যালেঞ্জ ও তার লোকদের ওপর দেশিও অস্ত্র নিয়ে হামলায় চালায়। এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী আব্দুল মতিন ও মহিউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বিলবোয়ালিয়া বিল ভোগ দখল করে আসছিলেন। জেলা প্রশাসন বিলটি ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করে। তিনি এ দরপত্রে অংশ নিয়ে বিলের ইজারা পান। প্রশাসনের কাছ থেকে বিল বুঝে নেয়ার পর সেখানে মাছের পোনাও ছেড়েছেন তিনি। গতকাল শুক্রবার ওই বিলের পরিচর্যার কাজে গেলে আব্দুল মতিন ও মহিউদ্দিনের ক্যাডাররা তাদের ওপর হামলা করে। এতে তিনি সহ কমপক্ষে তার ৬ জন আহত হন। এর মধ্যে তার সহযোগি শাহেদ র্ছরা গুলিতে আহত হয়েছেন। তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শাহেদ কুষ্টিয়া শহরের মোল্লাতেঘরিয়া এলাকার মহিবুল ইসলামের ছেলে। শাহেদের শরীরে র্ছরা গুলি লেগেছে বলে নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার ডা. সুতপা রায়। অপরদিকে বিলের মালিকানা দাবিদার আব্দুল মতিন বলেন, আরএস রেকর্ড অনুসারে এই বিলের মালিক আমরা। এখানে সরকারের কোন খাস জমি নাই। তবে এসএ রেকর্ড অনুসারে সরকারের শর্ত থাকায় সরকার এই বিল ইজারা দিয়ে থাকে। যা আমি প্রতিবছর ইজারা নিয়ে থাকি। তবে এবার কোন নোটিশ ছাড়াই বিল ইজারার কথা বলে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ শতাধিক ক্যাডার বাহিনীর সাথে নিয়ে আমার বিলে চাষ করা মাছ ধরতে নামে। এসময় এলাকাবাসী সহ আমি বাঁধা দিতে গেলে তার সাথে আসা ক্যাডার বাহিনী আমি সহ গ্রামবাসীর উপর হামলা চালায় ও গুলি করে। এতে এলাকার মৃত আনারুল মিরের বড় ছেলে মিজানুর রহমান (৪৫) ও ছোট ছেলে মিনহাজ মির (৪০) আহত এবং মুফাজ মিরের ছেলে আক্তারুল ইসলাম (৩৫) আহত হয়েছেন। বিলের দখল নিয়ে হামলা ও গুলির বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, বোয়ালিয়া বিলের ইজারাদারের ওপর হামলার ঘটনার খবর পাওয়ার পর সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে সেখানে গুলিশ ঘটনা ঘটেছে কিনা সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দৌলতপুর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আহসানুল হক বলেন, গত পহেলা বৈশাখ বিলের দখল বৈধ ইজারাদার শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় অবৈধ দখলদার আব্দুল মতিন ও মহিউদ্দিনকেও ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তারা কেউ আসেননি। দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, অবৈধ দখলমুক্ত করে বিলটি এ বছর ইজারা দেওয়া হয়েছে। সেখানে কেন হামলার ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হবে।