কৃষি প্রতিবেদক ॥ মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণসম্পন্ন খাবার। এতে আছে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যামাইনো এসিড, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। স্বাদ, পুষ্টি ও ঔষধিগুণের কারণে ইতোমধ্যেই এটি সারাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাশরুম চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণ যুবকরা মাশরুম চাষ করছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গৃহিণীরাও চাষ করছেন। অর্থাৎ আমাদের দেশে ঘরোয়াভাবে এবং বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। মাশরুম চাষ আমাদের দেশের বেকার সমস্যা সমাধান এবং বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে মাশরুম বিশেষ অবদান রাখতে পারে। মাশরুম চাষ করার জন্য কোনো আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। ঘনবসতিপূর্ণ ও দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার বাংলাদেশে খাবারের চাহিদা বাড়ছে অথচ খাবার জোগান দেওয়ার জমি প্রতি বছর কমছে। এই অবস্থায়, অনুৎপাদনশীল ফেলনা জমির স্বল্প পরিমাণ ব্যবহার করেই বিপুল পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা যায়। বাংলাদেশের আবহাওয়া মাশরুম চাষের জন্য উপযোগী। মাশরুম চাষ পরিবেশবান্ধব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহনশীল। এ পর্যন্ত মাশরুমের ১৬২টি জাত দেশে এনেছে মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট। দেশে চাষের উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের পাহাড়ি ও বনাঞ্চল থেকেও ১৪০টি জাত সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া, ইনস্টিটিউটে মাননিয়ন্ত্রণ ও মান নিশ্চিত করতে আধুনিক ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ল্যাবে মাশরুমের পুষ্টি ও ঔষধিগুণসহ ভিটামিন, মিনারেল নির্ণয় করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মাশরুম খুবই সম্ভাবনাময়। এটি খুবই পুষ্টিকর, যাতে প্রোটিন আছে ২২ ভাগের মতো। যেখানে চালে শতকরা ৮ ভাগ, গমে প্রায় ১২ ভাগ প্রোটিন রয়েছে। এছাড়া এটি অর্থকরী ফসল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের আমলে দরিদ্রের হার আমরা শতকরা ৪০ ভাগ থেকে ১৮ ভাগে আর চরম দরিদ্রের হার ১৮ ভাগ থেকে ৬ ভাগে নামিয়ে এনেছি। মাশরুমের চাষ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশে কোনো দরিদ্র থাকবে না। তাছাড়া, আগামী ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে আমরা মাশরুম বিদেশে রপ্তানি করতে পারব। দেশের প্রত্যেক উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাদের ২০০ থেকে ৩০০ মাশরুম উদ্যোক্তা তৈরির জন্য এ সময় নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
এ বিষয়ে মাশরুম চাষের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দরিদ্র হ্রাসকরণ প্রকল্পের পরিচালক আখতার জাহান কাঁকন জানান, মাশরুম চাষ সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করতে পারলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। দেশে বর্তমানে প্রায় ৪০ থেকে ৪১ হাজার টন মাশরুম প্রতি বছর উৎপাদন হচ্ছে- যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ অনেক দেশেই মাশরুম রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। চাষিরা শুকনা ওয়েসটার মাশরুম রপ্তানি শুরু করেছে যার অনেক চাহিদা আছে। এসব শুকনা মাশরুম দুবাই, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে চাহিদা আছে। শিক্ষিত বেকার যুবক, যুবতিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে পারলে মাশরুমের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি হবে। তিনি আরো জানান, সম্ভাবনাময় এ ফসলটির চাষ সম্প্রসারণের প্রধান অন্তরায়গুলো হলো- আমাদের খাদ্যাভ্যাসে মাশরুম না থাকা, রান্না- প্রক্রিয়াজাতকরণে জ্ঞানের অপ্রতুলতা; মাশরুম খাওয়া যাবে কি যাবে না, অর্থাৎ হালাল কি হারাম এ বিষয়ে দ্বিধা; এ দেশের প্রচলিত অন্যান্য ফসলের চাষ পদ্ধতির সঙ্গে মাশরুম চাষ পদ্ধতির মিল না থাকা এবং মাশরুম চাষে উচ্চ মূল্যের যন্ত্রপাতি ও উচ্চপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন হওয়া, গ্রামাঞ্চলে মাশরুম বাজারজাতকরণের সমস্যা, ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার অভাব, সব জায়গায় মাশরুমের উপস্থিতি না থাকা। সেজন্য, মাশরুমের চাষ সম্প্রসারণ ও খাবার হিসেবে জনপ্রিয় করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাশরুম চাষের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দরিদ্র হ্রাসকরণ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ২০২৩-২৭ পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের মোট বাজেট ৯৬ কোটি টাকা।
লেখক ঃ কামরুল ইসলাম ভূইয়া: সিনিয়র তথ্য অফিসার, কৃষি মন্ত্রণালয়।