1. admin@andolonerbazar.com : : admin admin
  2. andolonerbazar@gmail.com : AndolonerBazar :
শিরোনাম :
মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর উপজেলা নির্বাচনে চুড়ান্ত প্রার্থী প্রকাশ চ্যাপম্যান ঝড়ে সমতায় নিউজিল্যান্ড অবিচারের শিকার হয়েছে বার্সা: জাভি মোস্তাফিজ ভাইয়ের প্রতিটা বল দেখি: শরিফুল ইসরায়েলি সেনা ব্যাটালিয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হবেন ২০ লক্ষাধিক দরিদ্র মানুষ : আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের পরিকল্পনা থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী সই হবে ৫ চুক্তি-সমঝোতা আরো ৩ দিনের সতর্কবার্তা বাড়তে পারে তাপমাত্রা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে চাই: প্রধানমন্ত্রী কুমারখালীতে বৃষ্টির আশায় ইস্তিসকার নামাজ আদায়

মাঠে সারের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমাতে হবে

  • সর্বশেষ আপডেট : সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩

 

কৃষি প্রতিবেদক ॥ বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষির ওপর নির্ভর করে এ দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভৌগোলিকভাবে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ার কারণে এখানকার জমি অত্যন্ত উর্বর। পলিমিশ্রিত এঁটেল, এঁটেল দোআঁশ মাটির কারণে এখানে যে  কোনো ফসল ভালো হয়। অন্যদিকে, বেশি ফসল ফলার প্রধান কারণ অসংখ্য নদী। তবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখানে ফসল উৎপাদনে নানা রকমের সমস্যা ঘটছে।

 

বাংলাদেশে প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে প্রায় ৩১৮ কেজি সার ব্যবহার করা হয়। এ হিসাবে প্রতি বিঘায় সারের ব্যবহার প্রায় ৪৩ কেজি। বিশ্বব্যাংকের ২০২০ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে বাংলাদেশে এক জমিতে বছরে গড়ে দুটি ফসল হয়। চীনে হয় বছরে তিনটি শস্য। তাই উৎপাদনের পরিমাণ ও বছরে ফসলের সংখ্যা বিবেচনায় নিলে বিশ্বে হেক্টর বা বিঘাপ্রতি সবচেয়ে বেশি সার ব্যবহার করছে বাংলাদেশ। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বেশি সার ব্যবহারকে মাত্রাতিরিক্ত বলছেন। দেশের আবাদি জমিতে সারের ব্যবহার কেমন হচ্ছে, তার তুলনা করতে চাল উৎপাদনে শীর্ষ চারটি দেশ যথাক্রমে চীন, ভারত, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়াকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তুলনা করা হয়েছে এশিয়ার  দেশগুলোর সঙ্গেও। তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশে এখনো প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সার ব্যবহার করা হয়। এতে কৃষকের যেমন বাড়তি খরচ হচ্ছে, তেমনি জমির উর্বরাশক্তি নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সার ব্যবহার নির্দেশিকা মূলত দেশের অঞ্চলভেদে প্রতিটি ফসলের জন্য আলাদাভাবে দেওয়া হয়েছে। দেশের সার্বিক গড় তথ্য না থাকায়, গবেষণার তথ্য নেওয়া হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, বোরো আবাদে গড়ে প্রতি হেক্টরে ১২০ থেকে ১৫০ কেজি সারের ব্যবহার যৌক্তিক।

 

প্রাকৃতিক সারের পরিবর্তে রাসায়নিক সার, সাধারণ কীটনাশকের পরিবর্তে বিদেশি কীটনাশক এমনকি বিদেশি সারও ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ এক সময় কেবল প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করে এ দেশের কৃষক ফসল উৎপাদন করত। মানুষের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে কৃষকে তার জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন করতে হচ্ছে। আর এজন্য অধিক মাত্রায় সার ব্যবহার করতে হচ্ছে। অনেক সার ব্যবহারে কোনো নিয়মনীতি মানা হয় না। গাছের পুষ্টি, বংশবিস্তার, ফুল, ফল ধারণ ও উৎপাদন বৃদ্ধিসহ মাটিকে সুস্থ এবং উর্বর রাখতে হলে সুষম ও পরিমিত উপায়ে সার ব্যবহার করতে হবে। কারণ অপরিমিত উপায়ে ও মাটি পরীক্ষা না করে সার ব্যবহার করলে উৎপাদন কম হয়। এতে কৃষকদের খরচের পরিমাণও বেড়ে যায়।

 

জমিতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সার ব্যবহার করলে ফসল আবাদের খরচ বেড়ে যায়, আবার বেশি পরিমাণ সার আমদানি ও কৃষকদের কাছে সস্তায় বিক্রয়ের জন্য ভর্তুকি বাবদ প্রচুর পরিমাণে অর্থ ব্যয় করতে হয়। এ ছাড়াও অব্যবহৃত সার বৃষ্টি অথবা সেচের পানির সঙ্গে মিশে গিয়ে পানি, মাটি, বায়ু তথা পরিবেশ দূষিত করে। পর্যাপ্ততা, সহজলভ্যতা ও দ্রুত সময়ে রিপোর্ট প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা এবং মাটি পরীক্ষা করে ফসলে সার ব্যবহারের সুফলের ব্যাপারে কৃষকরা অসচেতন হওয়ার কারণে আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষকরা নিজের অভিজ্ঞতার আলোকেই জমিতে সার ব্যবহার করে থাকেন।

যে কোনো ফসল চাষে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশজাতীয় সারই বেশি ব্যবহার করা হয়। ইদানীং অনেকে জমির মাটি পরীক্ষা ছাড়া চুনও ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া বাড়তি তৈরি ছত্রাকনাশক হিসেবে কপারজাতীয় ছত্রাকনাশ মিশ্রণও ব্যবহার করছেন। জিঙ্ক সার হিসেবে সস্তায় পাওয়া যায় বলে দস্তা সারের অহেতুক ব্যবহারও কম নয়। পরিমাণের চেয়ে বেশি হলে বা ব্যবহারের প্রয়োজন না হলে যে কোনো রাসায়নিক সার মাটির ক্ষতি করতে পারে। তাই মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানের অবস্থা বুঝে সার ব্যবহার করা উচিত। আবার এক ফসলে সার ব্যবহারের পরের ফসলে সার কম লাগে বা না দিলেও চলে  সেদিকেও লক্ষ্য রাখা দরকার। জমিতে একবার চুন ব্যবহারের পর পরের এক বছর চুন ব্যবহার করতে হয় না। গাছের সমস্যার কারণে কপারজাতীয় ছত্রাকনাশক ব্যবহারের আগে মাটিতে তার অবস্থা জেনে ব্যবহার করা ভালো। প্রয়োজন হলে এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে, যাতে ব্যবহারের পর মাটিতে না মিশে। অর্থাৎ সার ব্যবহারের সময় লক্ষ্য রাখা দরকার,  কোনোভাবেই যেন তা মাটিতে অতিরিক্ত জমা না হয়। কারণ মাটিতে সারের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন, গাছ তার জন্য বিশেষভাবে দরকারি সারের উপাদানগুলোর স্বাভাবিক গ্রহণক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

সুষম ও পরিমিত সার ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা না থাকার কারণে আমাদের দেশের কৃষকরা সুষম ও পরিমিত মাত্রায় সার ব্যবহারে উদাসীন। অধিকাংশ কৃষক তাদের নিকটস্থ কৃষক ও স্থানীয় সার বিক্রেতার পরামর্শ মোতাবেক এবং তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে জমিতে সার প্রয়োগ করে থাকেন। বাজারে অধিকাংশ সারের পর্যাপ্ত  জোগান এবং সরকারি ভর্তুকির মূল্যে দামে সস্তা হওয়ার কারণে অনেক কৃষক বেহিসাবি মাত্রায় বেশি পরিমাণ সার ব্যবহার করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ টিএসপি সারের পর্যাপ্ত  জোগান এবং তুলনামূলক দামে সস্তা হওয়ার কারণে বিগত কয়েক বছরে কৃষকপর্যায়ে এই সারের ব্যবহার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইউরিয়া সারের দাম বাড়ানোর পর এখন সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় সারের পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময় সার ফসল উৎপাদনের জন্য যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনি সারের অতিরিক্ত ব্যবহার ফসল, মাটি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সারের অতিরিক্ত ব্যবহারে ফসল উৎপাদনের খরচ ও বৃদ্ধি পায়। সারের ব্যবহার পরিমিত করতে কৃষকদের যেসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- পরিমিত সার ব্যবহারে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়। ফলে বালাইনাশক কম লাগে। অধিক ইউরিয়া ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন কখনো কখনো বৃদ্ধি পেলেও জমির উর্বরতা কমে যায়। নাইট্রোজেন বাতাসে মিশে পরিবেশ দূষণ করে। আবার পানিতে মিশে মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়।

কৃষিবিদ আব্দুস সোবান বলেন, অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার ব্যবহারে সাধারণত গাছের কোষ প্রাচীর পাতলা হওয়ায় কাঠামোগত শক্তি কমে যায়। গাছের কান্ড স্বাভাবিকের চেয়ে লম্বা ও নরম হয় এবং কান্ডের চেয়ে পাতা বেশি ভারী হয়। ফলে গাছ সহজেই হেলে পড়ে। এ অবস্থায় গাছের প্রতিরোধ শক্তি কমে যাওয়ায় রোগ ও পোকামাকড় সহজেই আক্রমণ করতে পারে। পাতার রং কালচে সবুজ হয়ে যায়। পাটের আঁশের মান কমে যায়। নাইট্রোজেন বেশি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফসফরাস ও পটাশিয়াম কম থাকলে ফুলের বৃদ্ধি কমে যায়, দানাজাতীয় ফসল পুষ্ট হতে সময় বেশি লাগে। টমেটোর ফলন কমে যায়, সুগারবিটের চিনির পরিমাণ কমে যায়। আলুতে পানির পরিমাণ বেড়ে যায়। ফসলের শিকড়ের বৃদ্ধি কম হতে পারে এবং ফসলও অনিয়মিতভাবে পাকতে পারে।

লেখক ঃ ইমরান সিদ্দিকি

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

আরো খবর
© All rights reserved ©2021  Daily Andoloner Bazar
Site Customized By NewsTech.Com