কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ সাংবাদিক হাবীব চৌহান ও রনজক রিজভীর বাবা আলহাজ্ব শেখ মোহা: সেলিমের সপ্তম তিরোধান দিবস পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর দুর্গাপুরের নিজ বাড়িতে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, জেলা শিল্পকলা একাডেমির যুগ্ম সম্পাদক শহীদুর রহমান রবি ও ও রফিকুল ইসলাম শাহীন, বোধন থিয়েটারের সেক্রেটারী জেনারেল আসলাম আলী, কুমারখালী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি জাকারিয়া খান জেমস এবং কবি, নাট্যকার ও গবেষক লিটন বিন আব্বাসসহ স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ধর্মীয় আলোচনায় অংশ নেন, মওলানা দেলোয়ার হোসেন, মওলানা জহির বিন মাজেদ, মওলানা আব্দুল্লাহ আনসারী, হাফেজ সাখাওয়াত হোসেন সুজন, হাফেজ মওলানা ইউসুফ আলী এবং মওলানা সাব্বির আহম্মেদ উপস্থিত ছিলেন। এ অনুষ্ঠানে আলহাজ্ব শেখ মোহা: সেলিমের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর সুহৃদ সতীর্থদের বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়। একই সঙ্গে তাঁর মহত্বের কথাও স্মরণ করা হয়েছে। শেখ মোহা: সেলিম এলাকায় একজন সৎজন ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বৃক্ষ প্রেমিক। তার বাড়ির আঙিনায় নানা প্রজাতির গাছ লাগিয়ে পাখিদের অভায়াশ্রম গড়ে তোলেন। তার বাড়িতে যতো প্রজাতির পাখির আনাগোনা এবং ডাকাডাকি শোনা যায়, যা অন্য কোথাও পাওয়া দুষ্কর। পাখিদের নিয়মিত খাবার দেওয়া এবং নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করায় শেখ মোহা: সেলিমের ঘরের চালায় আজও ঘুঘু বাসা বেঁধে বংশ বিস্তার করে। পাখিদের বংশ বিস্তার এবং পরিবেশ সৃষ্টি করতে দুর্গাপুর-তারাপুর সড়কের কালিবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার পাশে আম গাছ লাগিয়ে নিয়মিত পরিচর্যা করতেন। সেই গাছগুলো আজও দৃষ্টি নন্দন হয়ে শোভা বর্ধনের পাশাপাশি পাখিদের বিশ্রাম ও আশ্রয়ের ক্ষেত্র হয়ে আছে। শেখ মোহা: সেলিম ব্যক্তি জীবনে ফার্নিচার শিল্পের বিকাশ ও রুচিশীল নির্মাণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। এ কারণে স্বাধীনতাত্তোর কুমারখালীতে ব্যাপক সুনাম ও পরিচিতিও লাভ করেন তিনি। অবশ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন, বরেণ্য রাজনৈতিক, সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ গোলাম কিবরিয়ার সহচার্যে অল্পদিনেই তাঁর এই খ্যাতি এনে দেয়। শেখ মোহা: সেলিম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার রাজহাটের ভাটুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি পূর্ব বাংলায় আসেন। প্রথমে কুষ্টিয়া, এরপর আসেন কুমারখালীতে। এখানেই বিয়ে করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগি হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি পরামর্শ ও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতেন। এতে তিনি বেশ কয়েকবার রাজাকারদের রোষানলেও পড়েন। এবং ভাগ্যক্রমে বেঁচেও যান। এদিকে আজও অনেক মুক্তিযোদ্ধা শেখ মোহা: সেলিমকে গুরু এবং ওস্তাদ সম্বোধন করে স্মরণ করেন। স্বাধীনতা পরবর্তীতে দুর্গাপুর পূর্বপাড়ার সমাজ প্রধান ছিলেন তিনি। এলাকার শৃংখলা রক্ষায় সবসময় অগ্রণী ভূমিকা রেখে গেছেন। তিনি অত্যন্ত সৎজন ব্যক্তি হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। ২০১৫ সালে পবিত্র হজ পালন করেন। এরপর দেশে ফিরে আবারও গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। বর্ণাঢ্য জীবনের শেষ ভাগে ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারি নিজ বাড়িতে গাছ পরিচর্যার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। এরপর দ্রুত কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে আইসিইউতে রাখা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ফেব্র“য়ারি কুষ্টিয়া থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন রুচিশীল ব্যক্তিত্ব শেখ মোহা: সেলিম।